মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩১শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** এত শিক্ষার্থীর জীবন হুমকিতে ফেললেন, সন্তানদের মুখ মনে পড়ল না—বাশারকে আদালত *** শিঙাড়া-জিলাপির জন্য সিগারেটের মতো সতর্কবার্তা দেখাবে ভারত *** নিজেকে মোটা ভাবা এক ধরনের মানসিক রোগ! *** তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার *** নিবন্ধন যাচাইয়ে এনসিপিসহ ১৪৪ দলই ফেল, সুযোগ পাচ্ছে সবাই *** হংকংয়ে অপেরা মঞ্চে ট্রাম্পের যমজ, ইভাঙ্কার স্বপ্নে অপহৃত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট *** লিটনদের জন্য ঢাকার সঙ্গে মিল রেখে প্রস্তুতি নিল পাকিস্তান *** তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে আপিল করা হবে: বদিউল আলম মজুমদার *** সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক: সি চিন পিং *** বদলির আদেশ ছিঁড়ে সাময়িক বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ৮ কর্মকর্তা

উদীচীর গঠনতন্ত্র ও কমিটি

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:৫১ অপরাহ্ন, ২১শে জুন ২০২৫

#

রহমান মুফিজ। ছবি: সংগৃহীত

রহমান মুফিজ

ঝামেলাটা হচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন, সিপিবির গঠনতন্ত্র আর উদীচীর গঠনতন্ত্রকে কেউ কেউ গুলিয়ে ফেলছেন। উদীচীর গঠনতন্ত্রে কোথাও গোপন ব্যালটে ভোটের অপশন নেই। যা হবে, তা প্রকাশ্যে হবে। হাত তোলা ভোটে হবে। এবং উদীচীর কাউন্সিল অধিবেশনে তা-ই হয়েছে।

হাত তোলা ভোটে ৮০ শতাংশ সদস্যই বিষয়-নির্বাচনী কমিটির প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। (বিষয়-নির্বাচনী কমিটির রিজার্ভ ৩৭ ভোট বাদে বললাম) বিষয়-নির্বাচনী কমিটিতেই তো ভোট হয়েছে। সেখানে অমিত রঞ্জন দে ২৬/৭ ভোটে হেরেছেন। হেরে হাউজ থেকে প্রার্থী হয়েছেন। সেখানেও ৮০/২০ পার্সেন্ট ভোটে হেরেছেন তিনি। 

এরপর হাউজের হাত তোলা ভোটে হেরে তার অনুসারীরা রীতিমতো সন্ত্রাসী কায়দায় মঞ্চে বিষয়-নির্বাচনী কমিটির সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। অধিবেশন পণ্ড করেছেন। হাত তোলা ভোট গণনার রেওয়াজ তো উদীচীতে আছেই। কিন্তু তারা হাত তোলা ভোট গণনা হওয়ার আগেই কাউন্সিল অধিবেশ পণ্ড করে দিয়েছেন। এবং তারা তা-ই চাইছিলেন। যাতে কোনোভাবেই ভোট গণনা না হয়।

এখন তারা দাবি করছেন, ভোট করতে হবে। ভোট তো অনেক প্রকার হয়। হাত তোলা ভোট, ভোট নয়? গোপন ব্যালটই কেবল ভোট? গোপন ব্যালটই গণতন্ত্রের একমাত্র নিক্তি?

উদীচীর গঠনতন্ত্রে গোপন ব্যালটের অপশন সত্যেন সেন-রণেশ দাশগুপ্তরা রাখেননি সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে। কারণ, তাতে সংগঠনে ‘পলিট্রিক্স’ (রাজনীতি) ঢুকে পড়বে। সে পলিট্রিক্সের হাত ধরে আসবে অনৈক্য, বিভ্রান্তি-বিশৃঙ্খলা। অমিত রঞ্জনরা আজ যা চাইছেন। 

উদীচীর গঠনতন্ত্রে ‘বিষয়-নির্বাচনী কমিটি’র বিধান রাখা হয়েছে সংগঠনের শৃঙ্খলা ও ঐক্যের জন্য। সংগঠনের বিভিন্ন স্তর থেকে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতাদের বিষয়-নির্বাচনী কমিটিতে নির্বাচিত করা হয়, যাতে একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ কমিটির প্রস্তাব তারা করতে পারেন। এবং এ বিষয়-নির্বাচনী কমিটিও নির্বাচিত হয় প্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে, অর্থাৎ হাত তোলা ভোটে।

গোপন ব্যালটই যদি উদীচীর রেওয়াজ হয় (ব্যতিক্রমভাবে দু’য়েকটা জেলা ও শাখায় যে গোপন ব্যালটে ভোট হয়নি, এমন নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তাতে সংগঠনের বিভক্তিও প্রকট হয়েছে, যা কাম্য নয়)। তাহলে তো বিষয়-নির্বাচনী কমিটির প্রসিডিউরে না গিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি তফসিল ঘোষণা করে প্রার্থিতা বাছাই করে সরাসরি নির্বাচনে চলে গেলেই হয়। তাতে যিনি চা-বিস্কুট বেশি খাওয়াতেন, তিনি জয়লাভ করতেন। কিন্তু উদীচীর বিষয়টা তো ভিন্ন।

তারা গোপন ব্যালটে ভোট ভোট করছেন কেন? জিজ্ঞেস করেন তো। গোপন ব্যালটের মহিমা কী? ম্যাজিক কী? 

ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতি করে বিভিন্ন জেলা ও শাখায় অসাঞ্জস্যপূর্ণ সদস্য বাড়ানো এবং সেটা দেখিয়ে সম্মেলনে নিজেদের পক্ষে বেশি সংখ্যাক প্রতিনিধি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে তারা মনে করছেন, গোপন ব্যালটে ভোটই তাদের প্রথম এবং শেষ ভরসা? বিয়াকুবিপনা আর কাকে বলে!

চিত্রটায় স্পষ্ট হননি কেউ? উদীচীতে কর্মরত সিপিবির সদস্যদের ফ্র্যাকশন সভা হয়েছে গত মার্চ মাসে। তাতেই ৮০ শতাংশ পার্টি কমরেড কাউন্সিলে অনুমোদিত কমিটির পক্ষে মত দিয়েছে, বলেছে সম্মেলন যথাযথভাবে সম্পূর্ণ। 

উদীচীর ১৯ সহ-সভাপতির মধ্যে ১২ জন একই বক্তব্য দিয়েছেন, তিন-চারজন নিরপেক্ষ ছিলেন। ১০ বিভাগীয় আহ্বায়কদের মধ্যে ৯ জনই বদিউর রহমানের অবৈধ তৎপরতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। এরপরও  যারা আন্দাজ করতে পারছেন না সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনের চিত্র কেমন ছিল—তারা আসলে কীসের ঠুলি পরে আছেন, সেটা জিজ্ঞাসা করতে হবে।

ফ্র্যাকশন সভার মতে, বাইরে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটি যে সিদ্ধান্ত প্রচার করে বেড়াচ্ছে, তাতে স্পষ্টভাবে উদীচীকে ভাঙার মতলব প্রকাশিত হয়েছে। এবং এটাও স্পষ্ট হয়েছে, বদিউর রহমানের পেছনে সিপিবির একটা অংশ ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে—যাতে উদীচী চূড়ান্তভাবে বিভক্ত হয়। অথচ সিপিবির সিদ্ধান্ত ছিল উদীচীকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার। সব পক্ষের সঙ্গে বসে, সব মত-দ্বিমত শুনে ঐক্যের উদ্যোগ নেওয়ার। কিন্তু সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সে পথে হাঁটল না। দুঃখজনকভাবে সিপিবির হাত দিয়েই উদীচীর ভাঙন নিশ্চিত হচ্ছে।

উদীচী ভাঙার এ ঘটনায় সিপিবির নাম যুক্ত হয়ে যাচ্ছে, ইতিহাসে এটা একটা বড় গ্লানি হয়ে থাকবে সিপিবির কমরেডদের জন্য।

লেখক: সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক।

আরএইচ/

ছাত্র ইউনিয়ন সিপিবি উদীচী গঠনতন্ত্র

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন