ছবি : সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে আন্দোলন চলে এসেছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তবে এখনও অনেকে বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে অনড় অবস্থানে আছে। কিন্তু প্রবেশের বয়সসীমার পাশাপাশি অবসরের বয়সসীমা নিয়েও চর্চা হচ্ছে। এই ইস্যুটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মহলে চলছে নানা গুঞ্জন। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা দুই বছর বৃদ্ধি পেলেও অবসর নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যারা চাকরিরত অবস্থায় আছেন, তাদের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি উঠেছে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা নিয়েও। এক্ষেত্রে আবার বিপরীতমুখী মতামত উঠে আসছে। বর্তমানে চাকরিরত অনেকে বয়সসীমা ৬৫ করার পক্ষে, কেউ আবার ৬২ বছরকে যৌক্তিক মনে করছেন। আবার এক পক্ষ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির পক্ষে থাকলেও অবসরের বয়স বৃদ্ধিতে তাদের রয়েছে আপত্তি।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের এবং অবসরের বয়সসীমা যথাক্রমে ৩৫ ও ৬৫ বছর নির্ধারণের দাবি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবেদন করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। সংগঠনটির আবেদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে অনুরোধ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর আবেদন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইএএম)।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিলো ৫৮ বছর, আর সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়স ছিলো ৫৭ বছর। ১৯৭২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অবসরের এই বয়সসীমা বহাল ছিলো। ১৯৯১ সালে চাকরিতে প্রবেশের বয়স একবারে তিন বছর বৃদ্ধি সাপেক্ষে অবসরের বয়সও তিন বছর বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েও সরকার প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে ৩০ বছর করলেও অবসরের বয়সসীমা মাত্র দুবছর বাড়িয়ে ৫৯ করে।
আরো পড়ুন : বাতিল হলো বিদ্যুৎ-জ্বালানির বিশেষ বিধান আইন
অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি যারা চান, তাদের দাবি ১৯৯১ সালের পর দীর্ঘ ৩৩ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়ে বর্তমানে ৭২ দশমিক ৩ বছর হয়েছে অথচ চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর যৌক্তিক বিষয়টি এখনো গৃহীত হয়নি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পরিসংখ্যান দিয়ে তাদের যুক্তি যুক্তরাজ্যে, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেনসহ ইউরোপীয় রাষ্ট্রে অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর।যুক্তরাষ্ট্রে ৬৬ বছর, আইসল্যান্ড ও নরওয়েতে ৬৭ বছর, জাপানে ৬২ বছর সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা। তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশে গড় আয়ু ৫৮ থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হলেও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি না করায় দেশ অভিজ্ঞ ও দক্ষ মানুষের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুস্থ, সবল, দক্ষ ও অভিজ্ঞ এসব মানুষের সেবা না নেয়া বিরাট এক জাতীয় অপচয়, এজন্য যতো দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে চাকরির অবসরের বয়সসীমা ৬২-৬৫ বছর করা আবশ্যক।
সম্প্রতি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা সবার বয়স ৩২ বছর করা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ নাগরিক ৫৯ বছরে আবার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা ৬০ বছরে অবসরে যান। তাই অবসরের ক্ষেত্রেও বৈষম্য নিরসন করে মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা উভয়ের অবসরের বয়সসীমা একই হওয়া উচিত।
দেশে চাকরির বাজার সংকুচিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে অনেকেই বেকার থাকছেন। এ অবস্থায় অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো হলে বেকারত্বের হার বাড়বে, চাকরির বাজার সংকুচিত হবে। তরুণদের চাকরির সুযোগ করে দিতে চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা না বাড়ানোর চিন্তা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
এস/ আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন