ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর বিভিন্ন হাটে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা কোরবানির পশু নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে অবস্থান নিচ্ছেন। তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি থাকবে। সাধারণত ওজনের ভিত্তিতে দাম ধরা হয়। সে হিসেবে এবার প্রতি মণ মাংসের দাম পড়বে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। এছাড়া গোখাদ্যের বাড়তি দামও প্রভাব ফেলবে। তবে চোরাই পথে ভারতীয় গরু না এলে ন্যায্যমূল্যে দেশি গরু বিক্রি হবে বলেও আশা ব্যাপারীদের।
ঝিনাইদহ থেকে রাজধানীর শাহজাহানপুর অস্থায়ী হাটে গরু নিয়ে এসেছেন চুন্নু মিয়া। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ১১টি গরু নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে ছয়টি গরু আমার লালনপালন করা। বাকি পাঁচটি কোরবানি সামনে রেখে দুই/তিন মাস আগে কিনে প্রস্তুত করেছি।
‘আমার আনা গরুর সর্বোচ্চ মূল্য দুই লাখ টাকা। এসব গরুর ওজন পাঁচ থেকে ছয় মণ হবে। আর যেসব গরুর দাম এক লাখ টাকা, সেগুলোর ওজন আড়াই থেকে তিন মণ হবে। আশা করছি, এবার প্রতি মণ মাংসের দাম ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা হবে। আর এমনিতে বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়।’
চুন্নু মিয়ার সঙ্গে ঝিনাইদহ থেকে মাত্র একটি গরু নিয়ে এসেছেন মহসীন মিয়া। তিনি বলেন, আমার গরুর ওজন পাঁচ থেকে ছয় মণ হবে। দুই লাখ হলে বিক্রি করব। এই দামে বিক্রি করতে পারলে খুব বেশি যে লাভবান হবো, তা নয়। তবে লস হবে না।
‘গোখাদ্যের দাম অনেক বেশি। এখন এক কেজি ছোলার দাম ১২০ টাকা, এক কেজি চালের কুড়ার দাম ৬০ টাকা। ৫৫ কেজির এক বস্তা চালের কুড়ার দাম পড়ে তিন হাজার টাকার মতো। আর এক কেজি খৈলের দাম পড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ফলে এবার কোরবানির গরুর দাম গতবারের তুলনায় মণে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা বাড়বে।’
ব্যাপারীরা বলছেন, ভারত থেকে চোরাই পথে গরু আসলে দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভারতীয় গরু এলে অন্যান্য গরুর দাম কমে যাবে। কারণ, ভারতে সবকিছুর দাম কম। তারা কম দামে গরু বিক্রি করতে পারবে। এছাড়া তারা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিয়ে গরু মোটাতাজা করে। এসব গরু খুব কম সময়ে বড় হয়ে যায়, অনেক ধরনের রোগ জীবাণু থাকে। মাংসের স্বাদও কম হয়।
লালমনিরহাট থেকে ১০টি গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি শাহজানপুর গরুর হাট থেকে বলেন, গরু পালনের খরচ আগের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেড়েছে। ফলে গরুর দাম বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। এখন চিন্তার বিষয় চোরাই পথে ভারত থেকে গরু আসে কি না, সেটি নিয়ে। ভারতীয় গরু দেশের এলে অনেক ব্যাপারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
‘ভারত থেকে গরু এলে দেশীয় গরুর দাম কমে যাবে। তখন আমাদের লস দিয়ে হলেও গরু বিক্রি করতে হবে। কারণ, মানুষ ঋণ নিয়ে গরু লালনপালন করে। কোরবানিতে বিক্রি করে কিছু লাভ করে, ঋণও পরিশোধ করে।’
আরো পড়ুন: কোরবানির আগে কমেছে সব ধরনের মসলার দাম
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষের আয় তো বাড়েনি।
শাহজাহানপুর হাটে ব্যাপারীদের গরু দেখতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে সবকিছুর দাম বেড়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। গরুর দামও বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষের আয় কি বেড়েছে? বাড়েনি।
‘ফলে কী হবে? গরুর দাম বৃদ্ধি পেলে বিক্রি কমবে। মানুষ কম দামে ছোট গরু খুঁজবে। একই সঙ্গে ভাগে কোরবানি দেবে।’
এসি/ আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন