ছবি: সংগৃহীত
সারাবিশ্বে চালের মধ্যে আর্সেনিকের দূষণ বাড়ছে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্ভবত চালে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। খবর বিবিসির।
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের প্রধান খাবার ভাত। আর তাই বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা চালে আর্সেনিকের মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি কমানোর উপায় খুঁজে পেতে কাজ করছেন। প্রায় সব চালেই আর্সেনিক থাকে। মাটি, পানি, বায়ু—সব জায়গাতেই আর্সেনিক থাকে। এটি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ধান চাষ করার সময় জমিতে আর্সেনিক জমা হয় এবং গাছের মাধ্যমে মাটি থেকে আর্সেনিক চালে প্রবেশ করে।
সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চালে যে মাত্রায় অজৈব আর্সেনিক পাওয়া গেছে, তা উদ্বেগের বড় কারণ হতে পারে। এ গবেষণার জন্য গবেষকেরা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে চীনের চারটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে ২৮ প্রজাতির ধানের চাষ করেছেন।
গবেষকেরা দেখেছেন, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়লে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে চালে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যায়। যে পরিমাণ মানুষ বর্তমানে ভাত খান, তাতে চালে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে গেলে কত মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তার একটি মডেলও দেখিয়েছেন গবেষকেরা।
এ ছাড়া গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, তারা চালে যে মাত্রায় আর্সেনিক দূষণ বেড়ে যাওয়া লক্ষ্য করেছেন, তাতে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ শুধু চীনেই বাড়তি আরও প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। যদিও ইউরোপ–আমেরিকাসহ বিশ্বে চাল উৎপাদনকারী সব অঞ্চলেই চালে অজৈব আর্সেনিক কমবেশি পাওয়া যায়।
এদিকে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক জিসকা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দুটি কারণ- বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। এর ফলে আর্সেনিকের পরিমাণ বাড়ছে। আর এতে ফুসফুসের জটিলতা ও হৃদ্রোগও বাড়বে।
চালে আর্সেনিকের পরিমাণ কমানোর উপায় হিসেবে ব্রিটেনের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন, রান্নার সময় কিছু নিয়ম অনুসরণ করে লাল চাল থেকে ৫০ শতাংশ এবং সাদা চাল থেকে ৭৪ শতাংশ আর্সেনিক দূর করা সম্ভব।
এ ক্ষেত্রে গবেষকেরা পরামর্শ দিয়েছেন, আগে থেকে গরম করে নেওয়া পানিতে চাল পাঁচ মিনিট সেদ্ধ করে সেই পানি ফেলে দিয়ে চালে নতুন করে পানি দিয়ে অল্প জ্বালে রেখে পানি পুরোটা শুকিয়ে ফেলতে হবে।
আরএইচ/