ছবি: সংগৃহীত
মলা পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি মাছ। খাল-বিল সংকুচিত হয়ে যাওয়ার ফলে প্রাকৃতিকভাবে এখন মলা মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি আবিষ্কার হওয়ার ফলে মলা মাছ এখন বড় পরিসরে চাষাবাদ শুরু হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মাছের সাথে মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে মলা মাছের চাষ এগিয়ে যাচ্ছে।
একক চাষ পদ্ধতি
যেহেতু মলা মাছের পোনা পরিবহন করা একটা জটিল পদ্ধতি এবং রেনু পরিবহন করা অত্যন্ত সহজ তাই রেনু নিয়ে নিজে পোনা তৈরি করে চাষাবাদ করাই উত্তম। এতে খরচ ও ঝুঁকি দুটোই কম। যারা অল্প খরচে চাষ করতে চান তারা নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফল পাবেন।
পুকুর প্রস্তুতকরণ
প্রথম দিন থেকে ৭/৮ দিন পর রেনু ছাড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রথমে পুকুরে বিষটোপ ব্যবহার করে সমস্ত মাছ মেরে ফেলতে হবে। তারপর পুকুরের সমস্ত পানি সেচ দিয়ে ফেলে দিতে হবে। যদি পুকুর আকৃতিতে বড় হয় তাহলে সব পানি অপসারণ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। এক্ষেত্রে অর্ধেক পানি ফেলে দিয়ে পরিস্কার পানি দিয়ে ভরে দিতে হবে। যদি কোনও পানি পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকে তাহলেও চলবে, সেক্ষেত্রে চুনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। বিষটোপ প্রয়োগের ২য় দিন শতাংশ প্রতি আধাকেজি চুন পানিতে গুলে ছিটিয়ে দিতে হবে। যদি পুকুর বেশি পুরাতন হয় এবং পানি পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ১ কেজি পরিমাণ চুন দেয়া ভাল। বিষটোপ প্রয়োগের ৬ষ্ঠ দিনে হাসপোকা মারার জন্য সুমিথিয়ন ব্যবহার করতে হবে পুকুরে। ০.৩ পিপিএম মাত্রায় সুমিথিয়ন ব্যবহার করতে হবে। অনেকেই হাসপোকা মারার জন্য অন্য ঔষধ ব্যবহারের জন্য বলে থাকেন। মলা মাছের ক্ষেত্রে সুমিথিয়ন ভালো। সুমিথিয়ন সন্ধ্যা বেলায় প্রয়োগ করতে হবে। এর দুদিন পর পুকুরে রেনু ছাড়তে হবে।
রেনু ছাড়ার পদ্ধতি
প্রথমে পানি ভর্তি রেনুর ব্যাগ পুকুরের পানিতে আধাঘন্টা ভাসিয়ে রাখতে হবে পুকুরের পানির সঙ্গে তাপমাত্রা সামঞ্জস্য হওয়ার জন্য। আধাঘন্টা পর ব্যাগের মুখ খুলে ব্যাগের পানির ভিতর হাত ঢুকিয়ে এবং পরে পুকুরের পানিতে হাত ঢুকিয়ে ব্যাগ ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা একই মনে হবে তখন পুকুরের পানি দিয়ে অল্প অল্প করে ব্যাগে ঢুকিয়ে আবার বের করে এভাবে রেনু ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে। এভাবেই রেনু ছাড়ার কাজ শেষ করতে হবে।
আরো পড়ুন: দুটি ভোল মাছ বিক্রি হলো ৫৫ হাজার টাকায়
রেনুর উপর খাবার প্রয়োগ পদ্ধতি
রেনু ছাড়ার ২ ঘন্টা পর খাবার দিতে হবে। দিনে ২ বার খাবার দিতে হবে। সকাল ১০টার দিকে এবং বিকাল ৫টার সময়। খাবার হিসাবে প্রথম ২ দিন ডিম (সাদা অংশসহ) খেতে দিতে হবে। এজন্য প্রথমে হাঁসের ডিম সিদ্ধ করে ব্লেন্ডার দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে পলেষ্টার কাপড় দিয়ে ছেঁকে মিহি মতো করে পানির সাথে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রতি ৫ শতাংশে একটি করে ডিম দিতে হবে। ৩য় দিন থেকে নার্সারী পাউডার ৩-৬ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রতি ১০ শতাংশে ১ কেজি খাবার দিতে হবে দিনে দুইবার ভাগ করে। ১০ দিন পর খাবার প্রতি ১০ শতাংশে ১.৫ কেজি খাবার দিতে হবে। এভাবে চলবে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত। এর পর খাদ্য প্রয়োগের কৌশল বদলাতে হবে।
পরিবর্তিত খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি : ২৫ দিন পর থেকে এক সপ্তাহের খাবার এক সাথে পুকুরে ভিজিয়ে রেখে খাওয়াতে হবে। যেহেতু মলা মাছ ফাইটোপ্লাংকটন ভোজী তাই একটু ভিন্নভাবে খাবার দেয়া আবশ্যক। ধরা যাক ১ সপ্তাহের জন্য ১০০ কেজি খাবার প্রয়োজন। এখন আর নার্সারী পাউডারের মতো দামী খাবার খাওয়াবো না। তাই ১০০ কেজি সরিষার খৈলকে সাতটা বস্তায় সমান ভাগ করে প্রতি বস্তায় ৪ কেজি ইউরিয়া সার খৈলের সাথে মিশিয়ে পানিতে খুঁটিতে বেঁধে রাখলে তিনদিন পর এই খৈলের বস্তা পানিতে ভেসে উঠবে। তারপর এক এক বস্তার খৈল প্রতিদিন দুইবেলা দিতে হবে। এতে প্লাংকটনের আধিক্যের পাশাপাশি মাছের খাবার ভালো মানের হবে। এভাবে সাড়ে তিন মাস থেকে ৪ মাসেই বাজারজাত করা যাবে মলা মাছ।
এসি/ আই.কে.জে/