শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দই বিক্রির টাকায় সমাজসেবা, পেলেন একুশে পদক

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৩:১১ অপরাহ্ন, ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক-২০২৪ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মঙ্গলবার (১৩ই ফ্রেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

তালিকায় ১৫ নম্বরে রয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিয়াউল হক। তিনি সমাজ সেবায় বিশেষ অবদান রাখায় এ পদক পাচ্ছেন। জিয়াউল হক (৯১) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার ভোলাহাট মুসরিভুজা গ্রামের বাসিন্দা। তার একুশে পদক পাওয়ায় আনন্দে ভাসছে পুরো জেলাবাসী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

জিয়াউল হকের বাবার নাম মরহুম তৈয়ব আলী মোল্লা এবং মায়ের নাম শরীফুন নেছা। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার ৩ নম্বর দলদলী ইউনিয়নের চামা মুশরিভুজা গ্রামে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর বর্তমানে তিনি বটতলা গ্রামে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন। লেখাপড়া করেছেন ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নেন তিনি। এরপর ১৯৬৯ সাল থেকে তিল তিল করে গড়ে তোলেন তার পারিবারিক লাইব্রেরি। পাশাপাশি নিজে দরিদ্র্যতার সঙ্গে আজীবন লড়াই করে নিরবচ্ছিন্নভাবে সমাজসেবা করে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ই ফেব্রুয়ারি) সকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় জিয়াউল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, গত বছরের আগস্ট মাসের রাস্ট্রীয়ভাবে একুশে পদকের জন্য তালিকা প্রস্তত করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি যোগাযোগ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) একেএম গালিব খাঁনের সঙ্গে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যান। তৎকালিন ইউএনও তার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। এরপরেই ২০২৪ সালের ২১শে পদকের জন্য তার নাম ঘোষণা করা হয়।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব ফোন করে প্রথমে মনোনীত হওয়ার বিষয়টি জানান।

জিয়াউল হক জানান, আমি দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে জেলায় ঘুরে ঘুরে মাথায় করে দই বিক্রি করি। দই বিক্রির টাকা দিয়ে ১৯৬৯ সালে ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামে জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করি। এরপর থেকেই আমার সমাজসেবা শুরু। এলাকার স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই প্রদান, স্কুল-কলেজে বেতন দেওয়াসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দিয়ে আসছি। আমার মাধ্যমে শত শত মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। যতদিন বেঁচে থাকবো-ততদিন মানুষের সেবা করতে চাই। একুশে পদকের জন্য মনোনীত হওয়ার তালিকা প্রকাশের পর তিনি বলেন, এই পদক শুধু আমার একার নয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকে গর্বিত করেছে এই পদক। এই পদক আমার সমাজসেবাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।

জেলা প্রশাসক একে এম গালিব খাঁন বলেন, সাদা মনের মানুষ জিয়াউল হক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা পাওয়ায় আমরা অত্যান্ত আনন্দিত। সেই সঙ্গে জেলাবাসীও আনন্দিত।

ওআ/

সমাজসেবা

খবরটি শেয়ার করুন