রবিবার, ১লা জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের কূটনীতি

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৪:২৪ অপরাহ্ন, ১৮ই মে ২০২৫

#

আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হুমকি শেষ পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়ংকর আকাশযুদ্ধে গড়ায়। তবে চারদিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। 

দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সরাসরি লড়াইয়ের বাইরে সুপ্ত অথচ সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এ পরিবর্তনের ক্ষেত্র ভারত-পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো।

এ দেশগুলো হলো—বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ। দেশগুলোর কোনোটির কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র নেই। দেশগুলো এ সংকটে কেবল নীরব দর্শক নয়, বরং তারা কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আঞ্চলিক ধাক্কার প্রতিক্রিয়ায় দেশগুলো এখন নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজাতে পারে।

এ দেশগুলোরই কিতাবি নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সুইং স্টেট।’ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতির আগেই এসব দেশের দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে।

এসব প্রভাব অঞ্চলের ছোট, পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন দেশগুলোর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে এবার ঝুঁকি বেশি। কারণ, এ ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ আরও বেশি হিসাব করে এগোতে হচ্ছে। এ অঞ্চলে চীন এখন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ উঠেছে।

‘আটলান্টিক কাউন্সিলের’ এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। ওই নিবন্ধে বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, সুখবরের পাঠকদের জন্য নিচে তা তুলে ধরা হলো-

‘ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের আলোকে এ অঞ্চলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে দেশটি অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও বৈদেশিক নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

নাগরিক সমাজ, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ও ইসলামপন্থী শক্তিগুলো ভারতের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠছে। তারা মনে করে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং তার দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তাদের এ ধারণা তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়—পূর্ববর্তী সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে শুরু করে নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন।

জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র হওয়ায় ঢাকা আরও স্বাধীন বা এমনকি (ভারত) বিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর (চিকেনস নেক) ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এটিকে মানবিক উদ্যোগ বলা হলেও ভারতীয় বিশ্লেষকরা এ পদক্ষেপকে ভারতের কৌশলগত অঙ্গনে বাইরের হস্তক্ষেপের বিস্তৃত প্রবণতার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।

ভারতের জন্য এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। বাংলাদেশ এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে দেশটি চীনের সাহায্যে অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে পারে, পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং নিরপেক্ষতাকেই সার্বভৌমত্ব হিসেবে তুলে ধরতে পারে। 

গত সপ্তাহে ভারত অবৈধ অভিবাসী ও রোহিঙ্গা আখ্যা দিয়ে অন্তত ২৬০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে (পুশ ইন) দিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের একতরফা পদক্ষেপ দেখে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত চীনের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে।

দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ যদি বহুমুখী অংশীদারত্ব এবং সফট ব্যালান্সিং—এর মাধ্যমে কৌশলগত আত্মনিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, তাহলে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ করে, মিয়ানমারের পাশে বাংলাদেশের অবস্থান এ পরিবর্তনকে আরও বেশি প্রভাবিত করবে এ অঞ্চলকে।’

এইচ.এস/


ভারত-পাকিস্তান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন