রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদকের সর্বাত্মক প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:৪১ অপরাহ্ন, ১৫ই নভেম্বর ২০২৪

#

বাংলাদেশে মাদকের ব্যবহার, ব্যবসা ও চোরাচালান নতুন নয়।বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বর্তমানে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। তরুণদের মধ্যে ইয়াবাসহ মাদকসেবীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যার কারণে তারা কিশোর গ্যাংয়ের মতো ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যার নেতিবাচক প্রভাবে যুবসমাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড) এর ২০২৩ সালের এক সমীক্ষামতে, মাদক চোরাকারবার থেকে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। তবে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মাদকের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশ একেবারে শীর্ষে রয়েছে।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেথামফেটামিন, হেরোইন এবং সিন্থেটিক ওপিওড যেমন বুপ্রেনরফিন এবং ফেনসিডিলের পাচার অন্তর্ভুক্ত, বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৯টি দেশের মাদকসংশ্লিষ্ট অবৈধ অর্থপ্রবাহের অনুমানভিত্তিক হিসাব তুলে ধরেছে সংস্থাটি। অন্য দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, মিয়ানমার, নেপাল ও পেরু।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদকের অবৈধ অর্থপ্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকো। এরপর যথাক্রমে রয়েছে কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু ও বাংলাদেশ। তালিকায় এশিয়ার যে ৫টি দেশের নাম রয়েছে, এর মধ্যে শীর্ষে  বাংলাদেশ, তারপর মালদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান ও মিয়ানমার।

মাদক ব্যবসার আড়ালে বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। সরকারের পরিবর্তনের সাথে সাথে মাদকের কারবারিদের হাতও বদল হয়। পুরোনোরা গা-ঢাকা দেয়। অনেকেই আবার  বিদেশেপাড়ি জমায়। তাদের স্থলে নতুনরা দায়িত্ব নেয়, কিন্তু  মাদক ব্যবসা বন্ধ হয় না। পুলিশ ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছু অবনতি ঘটায় আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মাদক কারবারিরা। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর, পল্লবী, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা ও বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক গ্রুপ। মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনায় বেশকয়েকজন নিহত ও অনেক লোক আহত হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারসহ বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের মাদক আটক করেছে।

সারাদেশে শহর থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত লক্ষাধিক সক্রিয় খুচরা মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশের কয়েক শতাধিক মাদক গডফাদাররা। এদের শেল্টার দিচ্ছে প্রশাসন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরাও। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, দেশ থেকে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের আড়ালে অন্তত দশ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে ২৪ ধরনের মাদক বেশি বিক্রি হচ্ছে। এসবের মধ্যে ইয়াবা, গাজা, ফেনসিডিল, মরফিন, হেরোইন, আইস ইত্যাদি বেশি। দেশে নতুন নতুন মাদকও আসছে। সে তুলনায় মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার ও মামলার সংখ্যা আশানুরূপ নয়। চোরাচালানিদের আছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসহ নিত্যনতুন অপকৌশল। এছাড়া আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ও অবৈধ বিপুল অর্থের হাতছানি।এজন্যই কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছোট ছোট মাদক কারবারি ও চোরাচালানিরা ধরা পড়লেও কিছুদিন জেল খাটার পর আবার জামিনে বের হয়ে আসে। কিন্তু মূল গডফাদাররা অর্থবিত্তের কারণে সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র কোটি কোটি টাকার মাদক পাচারের জন্য ট্রানজিট রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে যাচ্ছে। এ দেশে কোকেন, অ্যামফিটামিন, ইয়াবা, হেরোইন, ফেনইথাইলামিনসহ প্রাণঘাতী কোনোমাদক উৎপন্ন না হয় না, কিন্তু প্রায়ই দেখা যাচ্ছে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থল কিংবা নৌ-বন্দরে এসবের চালান জব্দ হচ্ছে। যদিও যা জব্দ হয় তা পাচারের তুলনায় যৎসামান্য।প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি।

দেশে মাদক সেবন ও বহনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। তারপরও মাদকের চালান ও ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না।কাজেই মাদকের সর্বাত্মক প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।জনগণের মধ্যে মাদকবিরোধী সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

আই.কে.জে/


মাদক

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন