বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৮শে ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাহবাগ হয়ে উঠেছে ‘আন্দোলনের রাজধানী’

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:০২ অপরাহ্ন, ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#

ছবি - সংগৃহীত

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যত মিছিল-মিটিং-আন্দোলন-সংগ্রাম হতো তার জন্য নির্ধারিত ছিল পল্টন ময়দান। অনেক সময় বড় দলগুলোর অফিসের সামনেও সমাবেশ হতো। একসময় ক্রীড়া পরিষদ পল্টন ময়দান তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। সভা-সমাবেশ ও আন্দোলনের জন্য মুক্তাঙ্গনকে বরাদ্দ দেয়া হয়। বেশ কয়েক বছর মুক্তাঙ্গনে সভা-সমাবেশ হয়েছে। মুক্তাঙ্গন একটি ব্যস্ততম এলাকা হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তাঙ্গন থেকে এই সভা-সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেওয়া হয়। সে ঘোষণা এখনো বলবৎ আছে। যদিও মাঝে একবার জাতীয় সংসদের সামনের রাস্তাকে সমাবেশের জন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানই ছিল সভা-সমাবেশের জন্য নির্ধারিত স্থান। রাজনৈতিক দলগুলো ইনডোর প্রোগ্রামগুলো  রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে করে থাকে। আবার ছোট কিছু দল বা গোষ্ঠী প্রেসক্লাবের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে সভা-সমাবেশ কিংবা  প্রতিবাদ জানায়।

শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ দিয়ে প্রথম আন্দোলন শুরু হয়। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে আন্দোলন শুরু হলে তখন উত্তাল হয়ে উঠে শাহবাগ। আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে এই স্থান। আন্দোলনকারীরা গণজাগরণ মঞ্চ নামে দেশ কাঁপানো এই আন্দোলন থেকে ফলও পেয়েছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সে সময় আইনও পরিবর্তন করা হয়েছে। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে উচ্চ আদালতে দেয়া হয় ফাঁসির রায়। সেই আন্দোলনের কথা এখনো মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। এরপর  ফের আলোচনায় আসে কোটা সংস্কার আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পুরো সময় ছিল শাহবাগ সরগরম। শাহবাগের আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। কোটা সংস্কার আন্দোলন সফল হয়। তৎকালীন সরকারের পতন হয়। তারপর থেকে শাহবাগ হয়ে উঠেছে বঞ্চিতদের দাবি আদায়ের ‘আন্দোলনের রাজধানী’।

শাহবাগকে ঘিরে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তিনটি হাসপাতাল অবস্থিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বারডেম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রচুর মানুষকে প্রতিদিন এখানে আসতে হয়। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রতিটিতেই দীর্ঘদিন এই রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে জনগণকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখনও প্রতিদিন কোনো না কোনো আন্দোলনের কারণে প্রায়ই শাহবাগ রাস্তা বন্ধ থাকে। কিন্তু প্রতিদিন সারা দেশ থেকে হাজার হাজার রোগী এই তিনটি হাসপাতালে আসেন। এসব রোগীকে হাসপাতালগুলোতে যেতে চরম বেগ পেতে হয়। আবার কেউ কেউ হাসপাতালে যেতে না পেরে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। কেউ বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্সেই মারা গেছেন। বৃহৎ দুইটি আন্দোলন সফল হওয়ার পর অনেকেই শাহবাগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর শাহবাগ হয়ে উঠেছে আন্দোলনের তীর্থস্থান। কোনো প্রকার ঘোষণা না দিয়েই সারা দেশ থেকে যার যার দাবি নিয়ে শাহবাগে চলে আসেন। এতে করে শাহবাগ ও তার আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শাহবাগ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার রেশ গিয়ে পড়ে রাজধানীর বৃহৎ একটি অংশে। এতে যাত্রী সাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। শাহবাগের আশপাশে রয়েছে রাজধানীর অন্যতম বেশক’টি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট। ওইসব মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আন্দোলন শুরু হলেই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। যার কারণে শাহবাগের আশপাশে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে প্রায় দিনই শাহবাগ অবরুদ্ধ থাকে। সবারই একটা ধারণা জন্মেছে যে, শাহবাগে গেলেই সবার দাবি আদায় হবে।

আন্দোলন-সংগ্রাম সকলের নাগরিক অধিকার। কিন্তু জনগণকে জিম্মি করে কোনো আন্দোলন কাম্য নয়। জনগণের দুর্ভোগ কমাতে শাহবাগের পরিবর্তে আন্দোলনের স্থান অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হোক।

আই.কে.জে/

শাহবাগ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন