প্রতীকী ছবি
অনেকে মনে করেন, বেশিরভাগ মানুষই দুঃখের গান শুনতে বেশি ভালবাসেন। মন ভারাক্রান্ত থাকলে এমন গানই শোনেন অনেকে। কিন্তু কেন?
জবাবে বলা হয়, পছন্দের সুরে মন ভালো হয়। অস্থির মন শান্ত হয়। পছন্দের গান শুনলেই ব্যথা–বেদনায় ভারাক্রান্ত মানুষ সাময়িকভাবে হলেও চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেন। সঙ্গীতের উপকারিতার কথা একবাক্যে মেনে নেন চিকিৎসকরাও। তাই মন খারাপ থাকলে তা নিয়ে অযথা চিন্তা না করে বরং গান শোনা ভালো। তাতে মন কিছুটা হলেও ভালো হতে পারে।
তবে এখানে একটি প্রশ্ন চলে আসছে। কী ধরনের গান শুনলে মন ভালো হবে? এই বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। বিজ্ঞান বলছে, বেশিরভাগ মানুষই দুঃখের গান শুনতে বেশি ভালবাসেন। এতে কী লাভ হয়?
একাধিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, দুঃখের গানই নাকি মন বেশি ভালো রাখে। যদিও এর প্রভাব ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দুশ্চিন্তা, নেতিবাচক চিন্তা অথবা একাকীত্বের অনুভূতি থেকে অনেকটাই রেহাই দিতে পারে দুঃখের গান।
আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দুঃখের গান নিয়ে বড়সড় গবেষণাই করে ফেলেছেন। তারা দাবি করেছেন, দুঃখের গান বা ঢিমেতালে চলা মিউজ়িক শুনলে নাকি আঠার মতো লেগে থাকা হতাশা ও অবসাদ অনেকটা দূর হয়।
‘দ্য জার্নাল অফ এস্থেটিক এডুকেশন’-এ এই বিষয়ে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। ব্রিটেনের ‘মন্টফোর্ট ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরাও এই বিষয়ে একমত। তারা দাবি করেছেন, এমন গানে যে কোনও নেতিবাচক ভাবনা দূর হতে পারে। অতিরিক্ত উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠায় যারা ভুগছেন, তারা যদি মিনিট দশেকও এমন গান শোনেন, তাহলে চিন্তার বোঝা অনেক নেমে যাবে।
গান বা সুর সোজা গিয়ে হানা দেয় মস্তিষ্কের ‘হাইপোথ্যালামাস’ নামের অংশে, যা কিনা সব আবেগের কেন্দ্র। পছন্দের গানে সেই অংশ উদ্দীপিত হয়৷ প্রচণ্ড শারীরিক যন্ত্রণা হলে বা উদ্বেগে যখন হৃৎস্পন্দন, নাড়ির গতি ও রক্তের চাপ বেড়ে যায় যায়, তখন এমন গানের সুরে তা কমতে শুরু করে।
আমেরিকার ‘ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির’ বিজ্ঞানীদেরও একই মত। তারা বহু মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, দুঃখের গান শুনলে মন-মেজাজ ভালো হতে শুরু করে। কারণ, এর ফলে ‘প্রোল্যাকটিন’ নামে এমন এক হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যা মনের যাবতীয় ব্যথা-বেদনা দূর করে। মনকে শান্ত করে এবং ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর ক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
দুঃখের গান শুনলে পুরনো স্মৃতি তাজা হয়ে ওঠে। ছোটবেলার কথা, আনন্দের কোনও মুহূর্ত বা প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তেরা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। ফলে মনেও আনন্দের অনুভূতি জাগে। এমনটাই দাবি ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’র বিজ্ঞানীদের।
গবেষকরা সমীক্ষা করে দেখেছেন, এমন গান শুনলে খারাপ স্মৃতিগুলোকে ভোলা সম্ভব হয়। তিক্ত অভিজ্ঞতা, আঘাত, অপমান, সম্মানহানি ও বিশ্বাসঘাতকতার মতো ঘটনা মনে গভীর দাগ কেটে যায়। এই সব অভিজ্ঞতা সহজে ভোলা যায় না। ফলে মানসিক শান্তি নষ্ট হয়। সমস্যা হলো, মন খারাপ থাকলে সুখ-স্মৃতির বদলে খারাপ স্মৃতিই মনে পড়ে বেশি।
তাই ওই সময়ে যদি এমন গান কেউ শোনেন, তাহলে মস্তিষ্কের ‘ডোরসোল্যাটারাল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’, অর্থাৎ মাথার যে অংশ আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেটি উদ্দীপিত হয়। ফলে খারাপ বা অপ্রিয় চিন্তা মাথায় আসে না। তবে এই গবেষণা যে সবার ক্ষেত্রেই সমান কার্যকরী হবে, তা নয়। গবেষকরা জানাচ্ছেন, মন খারাপ থাকলে তা নিয়ে অযথা চিন্তা না করে বরং গান শোনা ভাল। তাতে মন কিছুটা হলেও ভালো হতে পারে।
কেসি/ এইচ.এস