ছবি: সংগৃহীত
সত্তর-আশির দশকের বলিউডে তিনি ছিলেন আলোচিত এক অভিনেত্রী। মাত্র কয়েক বছরের ক্যারিয়ারেই অভিনয় করেছিলেন একের পর এক হিট ছবিতে। কিন্তু সাফল্যের আড়ালেই তার ব্যক্তিগত জীবন ছিল দুঃখে ভরা। বলিউডের সেই তারকার নাম লীনা চন্দ্রাভারকর। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ফিল্মফেয়ার।
১৯৫০ সালের ২৯শে আগস্ট কর্ণাটকের ধারওয়াড়ে জন্ম লীনার। কোঙ্কণি মারাঠি পরিবারে বেড়ে ওঠা এই অভিনেত্রীর বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। ছোটবেলা থেকেই স্কুল নাটকে অভিনয় করতে করতে সিনেমার প্রতি আগ্রহ জন্মায় তার।
লীনার বাবার প্রথমে ইচ্ছাই ছিল না যে মেয়ে সিনেমায় নাম লেখাক। ফিল্মফেয়ার ট্যালেন্ট কনটেস্টে অংশ নিতে চাইলে বাবা রীতিমতো বাধা দেন। প্রতিবাদে বই ফেলে রেখে পরীক্ষা না দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন লীনা। শেষ পর্যন্ত বাবাই মেনে নেন।
সেই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন রাজেশ খান্না ও ফরিদা জালাল, আর মাত্র ১৫ বছরের লীনা ছিলেন রানারআপ। তবে চলচ্চিত্রজগৎ তাকে ডাকতে শুরু করে ‘বেবি’ নামে।
কয়েকটি বিজ্ঞাপন করার পর সুনীল দত্ত তাকে নেন ‘মন কা মীত’ (১৯৬৮) ছবিতে, বিপরীতে বিনোদ খান্না। মাত্র ১৮ বছর বয়সে বলিউডে পা রাখেন সুনীল দত্ত প্রযোজিত ছবির মাধ্যমে, বিপরীতে ছিলেন নবাগত বিনোদ খান্না।
এরপর একে একে ‘হামজোলি, ‘হানিমুন’,‘মেহবুব কি মেহেন্দি’, ‘মঞ্চলি’, ‘দিল কা রাজা’, ‘এক মহল হো সাপনো কা’, ‘বিদায়ী’, ‘প্রীতম’, ‘বৈরাগ’, ‘ইয়ারোঁ কা ইয়ার’—এমন বহু জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করে জায়গা করে নেন দর্শকের মনে।
সেই সময়ের তিন শীর্ষ নায়ক—জিতেন্দ্র, রাজেশ খান্না ও বিনোদ খান্নার সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। লীনা ছিলেন মীনা কুমারীর ভক্ত। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বাস্তব জীবনে লীনার কাহিনিও যেন হয়ে উঠেছিল মীনা কুমারীর ছবির মতোই দুঃখে ভরা।
১৯৭৫ সালে, মাত্র ২৫ বছর বয়সে, লীনা বিয়ে করেন গোয়ার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী দয়ানন্দ বান্দোদকরের ছেলে সিদ্ধার্থ বান্দোদকরকে। কিন্তু বিয়ের অল্প কিছুদিন পরেই মারা যান সিদ্ধার্থ। ১৯৭৬ সালের নভেম্বরে মাত্র ১১ মাসের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। প্রথম স্বামীকে হারিয়ে জীবনের বড় ধাক্কা সামলাতে হয় তরুণী লীনাকে।
সেই ধাক্কায় ভেঙে পড়েন লীনা। আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন। আত্মীয়-পরিজনের কটু কথা, সমাজের কুসংস্কার তাকে আরও আঘাত করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর মুম্বাই ফিরে এসে আবার কাজ শুরু করেন।
১৯৭৯ সালে কিশোর কুমারের সঙ্গে পরিচয়। ধীরে ধীরে লীনার মনে জায়গা করে নেন তিনি। ‘তিনি কখনো “আই লাভ ইউ” বলেননি, তবে তার সঙ্গে থাকলে নিরাপদ বোধ করতাম,’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন লীনা। তবে বিয়ে সহজ ছিল না।
কিশোরের বয়সে ২১ বছরের পার্থক্য, আগের তিনটি ব্যর্থ বিয়ে—সব মিলিয়ে পরিবার প্রথমে বাধা দিয়েছিল। কিন্তু কিশোরের গান, ধৈর্য আর রসবোধে শেষ পর্যন্ত বাবাও মেনে নেন। ১৯৮০ সালে ৩০ বছর বয়সে দ্বিতীয় বিয়ে করেন কিশোর কুমারকে।
পরের বছরই এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বিয়ের সময় তিনি ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিয়ে করেন তারা। এরপর জন্ম হয় ছেলে সুমিত কুমারের।
সুখের সেই সংসারও বেশি দিন টেকেনি। ১৯৮৭ সালে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কিশোর কুমার। তখন লীনার বয়স মাত্র ৩৭। আবারও একা হয়ে গেলেন তিনি।
কাকতালীয়ভাবে দীপাবলি উৎসব লীনার জীবনে কেবল দুঃখের স্মৃতি বয়ে এনেছে। তার মা মারা গেছেন দীপাবলির সময়, ভাই আত্মহত্যা করেছেন ওই সময়েই। এমনকি স্বামী সিদ্ধার্থ ও কিশোর কুমার দুজনকেই হারিয়েছেন দীপাবলির কাছাকাছি সময়ে। ফলে এ উৎসব তার কাছে আনন্দ নয়, বরং বেদনার স্মৃতি।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন