ছবি : সংগৃহীত
আফ্রিকার কিছু দেশে এমপক্স বা মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও বিশ্বব্যাপী তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে ইউরোপ ও এশিয়ায় শনাক্ত হয়েছে অতি সংক্রামক এ রোগ। এই রোগের জন্য দায়ী মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। এটি স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের জন্য দায়ী ভাইরাসের একই শ্রেণিভুক্ত। তবে তা গুটিবসন্তের ভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই কম ক্ষতিকর।
বুধবার (১৪ই আগস্ট) এমপক্সকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে বৈশ্বিক ‘জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এরইমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশ, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, পাকিস্তানসহ আফ্রিকার দেশগুলো এ ভাইরাস মোকাবেলায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে।
ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইসোস বলেছেন, এমপক্স আফ্রিকা এবং এর বাইরে আরও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ‘খুব উদ্বেগজনক’। এই সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বন্ধ করতে এবং জীবন বাঁচাতে একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া অপরিহার্য।
১৯৭০ সালে আফ্রিকার দেশ ডিআর কঙ্গোতে মানবদেহে প্রথম এমপক্সের সংক্রমণ হয়েছিল। পরে সেটি অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে, এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাস থেকেও অন্য কেউ এতে সংক্রমিত হতে পারে। এমপক্সের উপসর্গ সাধারণ ফ্লুর মতোই। এটি ত্বকের ক্ষত সৃষ্টি করে, যা মারাত্মক প্রাণঘাতী হতে পারে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৪ শতাংশ।
আরো পড়ুন : হঠাৎ বুকে ব্যথা, গ্যাসের নাকি হার্টের?
আফ্রিকায় এমপক্স ভাইরাসের দুটি প্রধান ঢেউ সঞ্চালিত হয়েছে। একটির ধরন হলো ‘ক্লেড আই’, এটি মধ্য আফ্রিকার স্থানীয়দের শরীরে বেশি সংক্রমিত হতে দেখা যায়। আরেকটির ধরন হলো ‘ক্লেড আইবি’। এটি এমপক্সের নতুন এবং আরও মারাত্মক ধরন, যেটিকে একজন বিজ্ঞানী ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এ নতুন ধরনটির কারণেই বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ডব্লিউএইচও।
চলতি বছরের শুরু থেকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে এ রোগে ১৩ হাজার ৭০০ জনের মতো আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৪৫০ জন মারা গেছেন। এরপর এটি বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া এবং রুয়ান্ডাসহ অন্যান্য আফ্রিকান দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
ডব্লিউএইচও'র জরুরি অবস্থা ঘোষণার দুই দিনের মাথায় ইউরোপের দেশ সুইডেনে প্রথমবার শনাক্ত হয় ভাইরাসটি। সুইডেনের জনস্বাস্থ্য সংস্থা শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মাত্র একজনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হলেও, এ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ।
এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানেও এমপক্স শনাক্ত হয়েছে। দেশটির খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) প্রদেশে এখন পর্যন্ত তিনজন রোগীর দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত কিনা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করার পরই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে এমপক্স মোকাবেলায় আগাম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চীন। যেসব দেশে এমপক্সের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে সেসব দেশ থেকে আসা মানুষ এবং যাদের মধ্যে এমপক্সের লক্ষণ রয়েছে চীনে যেতে হলে তাদের পরীক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিক পর্যায়ে চীনে ঢোকার আগে নিজ উদ্যোগে কাস্টমসকে এমপক্স বিষয়ক তথ্যগুলো জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এমপক্স আক্রান্ত দেশগুলো থেকে চীনে যাওয়া যানবাহন, কনটেইনার ও পণ্য জীবাণুমুক্ত করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এস/ আই.কে.জে/