মঙ্গলবার, ২১শে জানুয়ারী ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করতে চায় চীন

হাসান শান্তনু

🕒 প্রকাশ: ১০:১৯ অপরাহ্ন, ২০শে জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

দেশের স্বাস্থ্যখাতে বিশাল বিনিয়োগ করতে আগ্রহী চীন। নতুন নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, স্বাস্থ্যখাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশের ৬৪ জেলায় হাসপাতাল স্থাপন করতে আগ্রহী দেশটি। এসব হাসপাতাল নির্মাণ হলে দেশের মানুষ সহজে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আরো উন্নত চিকিৎসাসেবা পাবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র সুখবর ডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

তবে সরকার এই মুহূর্তে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বিশেষায়িত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণে। গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাকে সরকার বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাদের সবাইকে সরকারি হাসপাতালগুলোয় ‘ফার্স্ট ট্র্যাক সার্ভিস’ দেওয়া হচ্ছে।

বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সরকার চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন একটি অধ্যায় খুলতে চায়। দুই দেশের সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তিতে আগামী মার্চ মাসে ড. ইউনূসকে বেইজিং সফরে নিতে চায় চীন। 

গত বছরের সেপ্টেম্বরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আগ্রহী চীন।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের চীন সফরকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

২০শে জানুয়ারি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন গেলে ২১শে জানুয়ারি বেইজিংয়ে তিনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বেইজিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি আলোচনায় আসবে। 

চীনের সহযোগিতায় ঢাকার পূর্বাচলে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমিসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বেইজিংকে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাব দেবে ঢাকা। এছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য চীনের কুনমিংয়ে তিন থেকে চারটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেওয়ার অনুরোধ বৈঠকে জানাতে পারে ঢাকা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের দেশের হাসপাতালে সম্ভব না হলে প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য চীনের এসব হাসপাতালে পাঠানো হবে। বাংলাদেশ সরকার তাদের চিকিৎসার সব ধরনের খরচ বহন করবে।

সুখবর ডটকমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চীনের স্বাস্থ্যখাতের অবকাঠামো নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাইনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। সাইনোফার্ম এই দেশে আন্তর্জাতিক মানের ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণ করতে চায়। দেশের স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘ বছর ধরে চীনের উপস্থিতি আছে। চীন থেকে হাসপাতালের যন্ত্রপাতির বড় অংশ আমদানি করা হয়। ওষুধের কাঁচামাল সংগ্রহেরও বড় বাজার চীন। এসবের পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতে আরো বিনিয়োগ করতে দেশটি বিভিন্ন সময় আগ্রহ প্রকাশ করে। দেশের ৬৪টি জেলায় ৫০ হাজার শয্যার হাসপাতাল করার প্রস্তাব ২০২০ সালে প্রথম দেয় চীন। ওই সময়ের আওয়ামী লীগের সরকার এ বিষয়ে বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেনি।  

 ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ২০২৪ সালের ২রা জুন  ওই সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে দেখা করলে সেদিনই আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের সহজে আরো বেশি মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিদেশি বিনিয়োগ নিতে চায়। চীনও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’ এ বিষয়ে চেষ্টা করেও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

২০২০ সালের চীনের প্রস্তাব ও উদ্যোগের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণের লক্ষ্যে ২০২৩ সালে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর পরের বছর ৯ই মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ বিষয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়।

আই.কে.জে/

স্বাস্থ্যখাত

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন