শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এশিয়ার দক্ষ কর্মী আনছে জার্মানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, ১৯শে জানুয়ারী ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

জার্মানির মতো শিল্পোন্নত দেশগুলোতে দক্ষ কর্মীর অভাব বড় সমস্যা হয়ে উঠছে। চাহিদা মেটাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে তরুণ শিক্ষানবিশদের জার্মানিতে আনা হচ্ছে। আর এই কাজে দেশটিকে সহায়তা করছেন রন শেনকে। শেনকে ভিয়েতনামে জার্মান ভাষার শিক্ষক ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠান গো-জার্মান’ জার্মানিতে শিক্ষানবিশ শিক্ষানবিশ সরবরাহ করেন। 

হাসান, মওলানা ও নাথান নামের জাকার্তা থেকে আসা ইন্দোনেশিয়ার তিন তরুণ জার্মানির গেরা শহরে জিএম নামের এক মেশিন প্রস্তুতকারী কোম্পানিতে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করছেন। ফাইলিং এবং করাত চালানো দিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হলো। এখনো তারা সে বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারছেন না। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে জার্মানিতে এসেছেন। জার্মানিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে আরো সুযোগের আশা করছেন তারা।

ফ্রাংক গ্নিশভিৎস তাদের বস। গত বছর তিনি একজনও জার্মান শিক্ষানবিশ খুঁজে পাননি। ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা তরুণদের প্রতি তার বিশাল প্রত্যাশা রয়েছে। ফ্রাংক বলেন, ‘সেখানে অবশ্যই অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে তারা এখানে আসতে চান। সেখান থেকে তাদের এখানে পাঠানো হয়। নির্দিষ্ট কারণে তারা এই পেশা গ্রহণ করতে চান। হয়তো আমাদেরও সাহায্য করবেন।’ 

ফাবিয়ান শার্ফ সরাসরি এই তিনজনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রথমবার ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষানবিশ এসেছেন। এখনো পর্যন্ত তাদের কাজে তিনি সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষানবিশরা এই সুযোগ পেয়ে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তাদের সময়জ্ঞান খুবই ভালো। কর্তব্যের তুলনায় সুযোগ হিসেবেই দেখেন। জার্মান শিক্ষানবিশদের ক্ষেত্রে প্রায়ই যেমনটা মনে হয়।’

রন শেনকে এমন শিক্ষানবিশ সরবরাহ করেন। মিউনিখে আন্তর্জাতিক বেকিং বাণিজ্যমেলায় তিনি আবার নতুন গ্রাহক খুঁজে পেয়েছেন। স্নাইডার বেকারি কোম্পানির প্রধান ইয়োর্গ আপরাট মনে করেন, ‘জার্মানির তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশের কাছে এই পেশা তেমন আকর্ষণীয় নয়। ফলে আমার মতে, দেশের সীমানার বাইরে নজর দিতে হবে। সত্যি বলতে কি আরো দূরে খোঁজ করতে হবে।’

অতীতে শেনকে ভিয়েতনামে জার্মান ভাষার শিক্ষক ছিলেন। জার্মানি সম্পর্কে তার ছাত্রছাত্রীদের বিশাল আগ্রহের কারণে তিনি ‘গো-জার্মান’ নামের সংস্থা খোলেন। এখনো পর্যন্ত তিনি এক হাজারেরও বেশি শিক্ষানবিশের হদিশ দিয়েছেন। প্রশিক্ষণের পর তারা জার্মানিতেই থেকে যেতে যান।

শেনকের মতে, ‘জার্মানিতে বেতনের যে মাত্রা, পেশাগত যোগ্যতা অর্জন করে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম বা মালয়েশিয়ায় ফিরে অবশ্যই সেটা পাওয়া যায় না। সেখানে কাজ করে মাসে বড় জোর তিনশো বা চারশো ইউরো আয় করা সম্ভব।’

জার্মানির বেকারিগুলোতে দক্ষ কর্মীর অভাব প্রকট হয়ে উঠছে। গো-জার্মানের এক জন গ্রাহক তাই চলতি বছরেও আবার ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষানবিশ নিয়োগ করতে চান। এক বেকারির মালিক হিসেবে ফ্রাংক ভিন্টারহাল্টার মনে করেন, ‘এখনো পর্যন্ত ইতিবাচক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অবশ্যই আগ্রহ বেড়ে গেছে। সে এখানে আছে বলে আমার কিছুটা ঈর্ষাও হচ্ছে। কারণ তখন বাকিদেরও আগ্রহ হচ্ছে, তারাও ভালো কর্মী পাবার সুযোগ পাচ্ছে।’

লাইপসিশ শহরের এক সংস্থার কর্মকর্তাও ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা শিক্ষানবিশদের নিয়ে সন্তুষ্ট। পাতাকান নামের এশিয়ান রেস্তোরাঁয় অতিথিদের সামনেই খাবার প্রস্তুত করা হয়। লালা, মিশেল ও নাথান টিমে নিজেদের ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছেন।

আরো পড়ুন: আইইএলটিএস ছাড়াই ২৬ হাজারের বেশি কর্মী নেবে জার্মানি

মাতাকান রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আলেক্সান্ড্রা ভুলো বলেন, ‘বলতেই হবে, প্রায় দেড় বছর পর আমাদের অভিজ্ঞতা শুধুই ইতিবাচক। কারণ তাদের কঠিন পরিশ্রমের মানসিকতা রয়েছে। অত্যন্ত ভদ্র ও সবসময় নির্ভরযোগ্যও বটে।’এই তিন জন সিস্টেম ক্যাটারিং ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। রান্না, অতিথিদের সেবার সঙ্গে ব্যবসার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও শিক্ষা নিতে হয়। তারা জার্মানিতেই থেকে যেতে চান।

হাসান, মওলানা ও নাথান একসঙ্গে একটি তিন কামরার ফ্ল্যাটে থাকেন। বাসার জন্য কিছুটা মন কেমন করে। বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেক কথা বলেন। মওলানার মা ছেলের কাজে গর্ব বোধ করেন। তার মতে, জার্মানিতে প্রশিক্ষণ ছেলের কর্মজীবনে অনেক সুযোগ এনে দেবে। তবে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মওলানা ও হাসানের এখনো কোনো ধারণা নেই। শুধু নাথান জার্মানিতে থেকে যেতে বদ্ধপরিকর। তিনি বিমান নির্মাণ নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখেন।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এইচআ/ আই.কে.জে/


এশিয়া জার্মানি দক্ষ কর্মী গোজার্মান

খবরটি শেয়ার করুন