ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা ওয়াসা কয়েক বছর ধরেই গ্রাহকের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী পানির দাম নির্ধারণের পরিকল্পনা করছে। বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের একটি বক্তব্যে।
রোববার (২১শে জানুয়ারি) ঢাকা ওয়াসা ভবনে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ভর্তুকি দিয়ে ঢাকায় ধনীদের পানি সরবরাহ করা উচিত নয়। ঢাকা ওয়াসার এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে খরচ হয় ২৬ থেকে ৩০ টাকা। বিক্রি করছে ১৫ টাকায়। সরকার কি বাকি ১৫ টাকা ভর্তুকি দিতে থাকবে?
ঢাকার বাসিন্দাদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী পানির দাম নির্ধারণ করতে এরই মধ্যে এলাকাভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ বিষয়ক টেকনিক্যাল স্টাডি (কারিগরি সমীক্ষা) করেছে ঢাকা ওয়াসা। নিম্ন আয়ের মানুষ, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত—এই পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করে পানির দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। এলাকাভিত্তিক দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার মৌজা দর, গৃহকর ও মাসিক আয়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রস্তাবিত দাম নিয়ে সুবিধাভোগীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বিশদ আলোচনার পর তা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
এতে যারা ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বেশি আয়তনের বাসায় থাকেন তারা উচ্চবিত্ত; ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বাসায় যিনি থাকছেন তিনি উচ্চমধ্যবিত্ত; ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বাসায় বসবাসকারীদের মধ্যবিত্ত এবং ১ হাজার বর্গফুটের নিচে বসবাসকারীদের নিম্নমধ্যবিত্ত হিসেবে ধরা হয়েছে। আর বস্তির বাসিন্দাদের নিম্ন আয়ের মানুষ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ কে এম সহিদ উদ্দিন সোমবার (২২শে জানুয়ারি) গণমাধ্যমকে বলেন, উৎপাদন খরচের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। সব উৎসের পানির একটি গড় খরচ ধরা হয়। মন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেই ২৫-২৬ টাকাই প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ।
আরও পড়ুন: ৭০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে বিশ্ব ব্যাংক
তবে সমীক্ষায় যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এভাবে পানির দাম নির্ধারণের বিষয় তাদের জানা নেই। অন্যান্য দেশে যত বেশি ব্যবহার, সে অনুপাতে দাম নির্ধারণের পদ্ধতি আছে। এ পদ্ধতিকে ইনক্রিসিং ব্লক ট্যারিফ (আইবিটি) বলে।
এদিকে ঢাকা ওয়াসা গত ১৪ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে। এবার ঢাকার বাসিন্দাদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী পানির দাম নির্ধারণ করতে চায় সংস্থাটি। ঢাকা ওয়াসার করা কারিগরি সমীক্ষায় বর্তমান দামের তুলনায় শ্রেণিভেদে ২৪ থেকে ১৪৭ শতাংশ পর্যন্ত পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত—সব শ্রেণির গ্রাহকেরই খরচ বাড়বে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ধনী-গরিব কারও ওপরেই অযৌক্তিক ব্যয়ভার চাপানো উচিত নয়। ঢাকা ওয়াসার অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নীরব থাকেন। ওয়াসা একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, পানির দাম নির্ধারণে বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।
ঢাকা ওয়াসার দাবি, উৎপাদন খরচের তুলনায় গ্রাহককে কম দামে পানি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানিতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ১০ টাকা। এই ভর্তুকি কমিয়ে সংস্থার লাভ বাড়াতে পানির দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পানির দাম কার্যকর করতে চায় সংস্থাটি।
এ ছাড়া ঢাকা ওয়াসায় ‘সিস্টেম লস’ (ব্যবস্থাগত অপচয়) ২০ শতাংশ। এ অপচয় কমাতে পারলে ওয়াসাকে পানির দাম বাড়াতে হতো না। সব খরচ বাদ দিয়ে ঢাকা ওয়াসা প্রতিবছর লাভ দেখায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। লাভে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকির কথা বলে পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি অযৌক্তিক বলে মনে করেন তারা।
বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ঢাকা ওয়াসার প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাইকে এই হারে পানির বিল দিতে হয়। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকদের প্রতি হাজার লিটার পানির বিল দিতে হয় ৪২ টাকা।
এসকে/ আই. কে. জে/