সোমবার, ১৯শে মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচিহ্ন

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, ৮ই মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

রবি হক

বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে আছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালির সংস্কৃতিজুড়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের পায়ের চিহ্ন। বাংলাদেশ ও ভারতের সাহিত্য, সঙ্গীত ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এবং উভয় দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা তিনি। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। তিনি এ দেশের বহু স্থানে ঘুরে-ফিরে বেড়িয়েছেন। আজও সেসব স্থান স্মৃতিচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

বাংলাদেশের অনেক জায়গার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে কবির স্মৃতি। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ি, শাহজাদপুর কাছারি বাড়ি, সিরাজগঞ্জের পতিসর, নওগার কুঠিবাড়ি ও খুলনার কুঠিবাড়ি শ্বশুরবাড়ী তার মধ্যে অন্যতম। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ঐতিহাসিক কুঠিবাড়িটি কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে অবস্থিত।

১৮০৭ সালে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে এ জমিদারির মালিকানা পান। রবীন্দ্রনাথ ১৮৮৯ সালের নভেম্বরে জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে সর্বপ্রথম শিলাইদহে আসেন। জমিদারি পরিচালনা করেন ১৮৯১-১৯০১ সাল পর্যন্ত। পদ্মার ভাঙ্গনে কুঠিবাড়িটি ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলে নির্মাণ করা হয় নতুন কুঠিবাড়ি।

 কবি ১৯১৩ সালে যে সাহিত্যকর্মের জন্য নোবেল পুরস্কার পান সেই ‘গীতাঞ্জলি’র অধিকাংশ কবিতাই রচনা করেছিলেন শিলাইদহে বসে। এখানে থাকা অবস্থায় রচনা করেন কল্পনা, ক্ষণিকা, চৈতালি, সোনার তরী, চিত্রা, জীবনস্মৃতি, পঞ্চভূতের ডায়েরি, চিরকুমার সভা, ঘরে বাইরে, চোখের বালি, বলাকা ছাড়াও অনেক প্রবন্ধ, উপন্যাস ও গান।

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর বাজারের পাশেই রবীন্দ্র কাছারি বাড়িটি অবস্থিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯০ সালে প্রথম শাহজাদপুর কুঠিবাড়িতে আসেন এবং ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত অনেকবার তিনি এখানে থেকেছেন। এখানে থাকা অবস্থায় তিনি অনেক সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করেছেন। বর্তমানে ভবনটি জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, শাহজাদপুর কাছারি বাড়িটি একটি দ্বিতল ভবন। 

এটি নির্মিত হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে। জমিদারি দেখাশোনার জন্য রবীন্দ্রনাথ ১৮৯০ সাল থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত এ কাছারি বাড়িতে আসতেন এবং সাময়িকভাবে এ বাড়িতে থাকতেন। জমিদারি দেখাশুনা ছাড়াও অনেকবার তিনি এ বাড়িতে এসেছিলেন। এখানে থাকা অবস্থায় গান, কবিতা, ছোট গল্প ও উপন্যাস রচনা করেছিলেন। জমিদারির সঙ্গে কাছারি বাড়িটিও ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়।

 রবীন্দ্রনাথের পতিসর কুঠিবাড়ি নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে নাগর নদীর তীরে অবস্থিত। ১৮৩০ সালে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ এ জমিদারি ক্রয় করেন। জমিদারি দেখাশোনার জন্য রবীন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম এখানে আসেন ১৮৯১ সালে। পতিসর কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন ১৯০৫ সালে এবং ১৯১৩ সালে কালিগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। 

১৯২১ সালে জমিদারি ভাগ হলে পতিসর রবীন্দ্রনাথের ভাগে পড়লেও নানা কারণে তিনি এখানে কম আসেন। এখানেই ১৯৩১ সালে বিখ্যাত সাহিত্যিক তৎকালীন নওগাঁ মহকুমার প্রশাসক অন্নদাশঙ্কর রায়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয়।অসুস্থ শরীর নিয়ে ১৯৩৭ সালের ২৭শে জুলাই তিনি পতিসর কুঠিবাড়ি থেকে বিদায় নেন। ১৯৮৬ সালে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় রবীন্দ্র সাহিত্য পরিষদ।

খুলনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ফুলতলা উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণডিহি গ্রামে। এ গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথের মা সারদা সুন্দরী, চাচি ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী ও স্ত্রী মৃণালিনী দেবী ওরফে ভবতারিণী। জরাজীর্ণ দ্বিতল ভবনের সামনে স্থাপন করা হয় বিশ্বকবি ও মৃণালিনী দেবীর আবক্ষ মূর্তি ও মৃণালিনী মঞ্চ। মঞ্চের অদূরে রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র।

শুধু জাতীয় সংগীতই নয়, বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিটি শাখায় রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে বাংলা ও বাঙালিকে কল্পনা করা যায় না। আজ ২৫ বৈশাখ (৮ মে) বাঙালির মহান পুরুষ বিশ্বকপি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

এইচ.এস/


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন