মসজিদে জিন, মক্কা। ছবি: সংগৃহীত
মানুষের মতো জিন জাতিও আল্লাহর মাখলুক। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের সঙ্গে জিন জাতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষের মতো জিনদের ওপর আল্লাহর ইবাদত ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৬)।
যারা মহান আল্লাহর এই নির্দেশনাগুলো মানবেন, তাদের পুরস্কারও পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ১০৭)।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে তার প্রতিপালকের সামনে হাজির হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য দুটি জান্নাত’ (সুরা আর রহমান, আয়াত: ৪৬)।
অনেক তাফসিরবিদের মতে, এই আয়াতগুলোতে মুমিনদের প্রতি যে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তা ব্যাপক। এখানে মানুষ মুমিন যেমন আছেন, তেমনি জিনদের মধ্যে যারা মুমিন, তারাও আছেন।
কুফরির ক্ষেত্রেও আল্লাহ দুই জাতিকেই সতর্ক করেছেন। যে মানুষ হোক বা জিন, যারাই আল্লাহর আদেশ অমান্য করবেন, তাদের জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেওয়া হবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি জাহান্নাম ভরে দেব জিন ও মানুষ দ্বারা একত্রে’ (সুরা হুদ, আয়াত: ১১৯)।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বহুসংখ্যক জিন আর মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শোনে না। তারা জন্তু-জানোয়ারের মতো, বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারা একেবারে বে-খবর’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৭৯)।
ইবনে মুফলিহ (রহ.) বলেন, জিনরাও ইবাদতের মুকাল্লাফ, তাদের কাফেররা জাহান্নামে যাবেন আর মুমিনরা জান্নাতে যাবেন। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো মাটি হয়ে যাবেন না। সুয়ুতি (রহ.) বলেন, জিনদের মধ্যে যারা কাফের, তারা যে জাহান্নামে যাবেন, এ ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য নেই। কিন্তু তাদের মুমিনরা জান্নাতে যাবে কী না, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তবে তাদের জান্নাতের যাওয়ার মতটি বেশি গ্রহণযোগ্য।
ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ.) বলেন, একশ্রেণির মতানুযায়ী জিনদের মধ্যে যারা মুমিন, তারা অন্যান্য প্রাণীর মতো মাটি হয়ে যাবেন, তাদের আমলের প্রতিদান হলো, জাহান্নাম থেকে মুক্তি। তারা মানুষের মতো সব ইবাদতের মুকাল্লাফ না; বরং কিছু কিছু ইবাদতের মুকাল্লাফ। কেউ কেউ বলেন, ঈমানদার জিনদের ঠিকানা হবে আরাফ।
কোরআনের আয়াত দ্বারা ঈমানদার জিনদের জান্নাতে যাওয়ার বিষয়টি বেশি স্পষ্ট হয় বলে অনেকে মনে করেন। ইরশাদ হয়েছে—‘সেখানে থাকবে সংযত নয়না কুমারি নারী, যাদের ইতিপূর্বে কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি’ (সুরা আর রহমান, আয়াত: ৫৬)।
কোনো কোনো তাফসিরবিদ লিখেছেন, মুমিন জিনরা মুমিন মানুষের মতো জান্নাতে যাবেন এবং তাদের জন্য সেখানে তা-ই থাকবে, যা অন্য ঈমানদারদের জন্য থাকবে। তবে জান্নাত ও জাহান্নামের মালিক আল্লাহ, জিন-ইনসানও আল্লাহর ইবাদত করেন। বিষয়টি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো। এর সঙ্গে যেহেতু কোনো ইবাদতের সম্পর্ক নেই, তাই কোনো একটা মত নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন