প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সম্প্রতি আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে। ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
গত আট মাসে অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে দেশে নতুন করে কোনো কর্মসংস্থান হয়নি। এ সময়ে দেশের প্রায় আড়াই-তিনশ শ’ গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়েছে।অন্যান্য খাতেরও অনেক মালিক এলসি খুলতে না পেরে ও প্রয়োজনীয় ডলার না পেয়ে কারখানা বন্ধ রেখেছেন। যার কারণে প্রতি মাসেই বেসরকারি খাতে ঋণ বা বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
গত আট মাসে এমন ব্যাংকও রয়েছে যারা বেসরকারি খাতে কোনো ঋণ দেয়নি। সমস্যায় নেই, এমন ব্যাংকও বেসরকারি খাতে ঋণ দিচ্ছে না। শিল্পখাতে ঋণ কমে যাওয়া ছাড়াও ব্যবসায়ীরা এখনো এলসি খুলতে পারছেন না। যার ফলে কর্মসংস্থানে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে বলা হয়েছে, ব্যাংকখাতে এখন বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত জানুয়ারিতে যেখানে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, সেখানে ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। সর্বশেষ যা ৭ শতাংশের নিচে নেমেছে। যা সাম্প্রতিক সময়ের যে কোনো সময়ের তুলনায় কম।
২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে ৭ শতাংশ নামলেও অন্যান্য সময় প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে ছিল। ব্যাংকখাতে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে নামায় ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কমেছে। অনেক ব্যাংকের হাতে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার মতো তহবিল নেই।
বর্তমানের এ প্রবৃদ্ধি গড় সুদহারের অনেক কম। এখন ব্যাংক ঋণের গড় সুদহার রয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে যা ৮ শতাংশের নিচে ছিল। ২০২১ সালের মে মাসে একবার ঋণ প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে নেমেছিল। করোনা-পরবর্তী সময়ে ওই মাসে প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ৫৫ শতাং।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, শেষ দেড় মাসে দিনে তা দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থনীতির এ অস্থিরতার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কারখানা। ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই,নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরে গত আট মাসে কয়েকশ’ শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েছে।
বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের। এতে কমছে কর্মসংস্থান, বাড়ছে বেকারত্ব। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, উচ্চ বেকারত্ব ও কম প্রবৃদ্ধির সমন্বয় ঘটার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে স্থবিরতার দিকে যাচ্ছে।
একদিকে বেড়েছে ডলারের দাম, অন্যদিকে ব্যাংক সুদহারও চড়া। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ করতে গেলে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে বাজারে পণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের জন্য এ সময় মোটেই অনুকূল নয়।
দেশের এ অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে কোনো ব্যবসায়ীই নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। সরকারের স্থায়ীত্ব কতদিন হবে, সেটা কেউ জানেনা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না।
বেসরকারি খাতই দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির প্রধান অংশ।কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হলে বেসরকারি খাতকে বিকশিত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই । শিল্পের উৎপাদন, বিপণন কিংবা সেবাখাত- সবই বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল।বর্তমানের মতো বিনিয়োগ পরিস্থিতির নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। খেলাপি ঋণ বেড়ে ব্যবসায়ীরা আরও নাজুক পরিস্থিতিতে পড়বেন।
এইচ.এস/