ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা যদি সাক্ষাৎকার দিতে চান, সেক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলেও তা নেবেন বলে জানিয়েছিলেন সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেবেন মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন দর্শকপ্রিয় এই উপস্থাপক।
তার বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে অনলাইন দুনিয়ায়। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ওই মন্তব্য নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা এখনো চলছে। এমনকী তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করছেন নেটিজেনেরা। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, সাক্ষাৎকার নেওয়ার এই ইচ্ছা শেখ হাসিনাকে রাজনীতিতে নরমালাইজ করার চেষ্টা কি-না?
আজ মঙ্গলবার (২৮শে অক্টোবর) রাজধানীর বেসরকারি স্টেট ইউনিভার্সিটির আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। আত্মপক্ষ সমর্থন করে জবাব দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে সমালোচনার। আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ওঠে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের ইচ্ছা সংক্রান্ত বিষয়ে। এ সময় কিছুটা খেদ প্রকাশ করেন খালেদ। তিনি নিজেই প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেওয়া মানে কী তাকে নরমালাইজ করা?
নিউইয়র্ক-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ঠিকানা’র এই সাংবাদিক বলেন, জার্নালিজম সবসময় যে বিষয়টা সবচেয়ে মাথায় রাখে, সেটা হচ্ছে পাবলিক ইন্টারেস্ট। তিনি বলেন, 'এখন জনগণের আগ্রহের জায়গা থেকে কেউ কেউ বলছেন, শেখ হাসিনা তো সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার ইন্টারভিউ নেওয়া উচিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি নারী-শিশু হত্যা, মানুষ হত্যা অনেক কিছুতে অভিযুক্ত, তার ইন্টারভিউ (সাক্ষাৎকার) নেওয়া কি তাকে নরমালাইজ করা হবে না?'
তিনি দাবি করেন, আমি আপনাদের বলি, পাঁচ লাখ ইন্টারভিউও শেখ হাসিনাকে নরমালাইজ করতে পারবে না। শেখ হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন এবং সেখানকার গণমাধ্যম তার হয়ে প্রচার চালাচ্ছে। ভারতে তো প্রায় ১৪০০টি গণমাধ্যম আছে, তারা তার (শেখ হাসিনা) হয়ে প্রচার-প্রচারণা চালায়। শেখ হাসিনা তাদের কেন সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন না? তার ইন্টারভিউ দেওয়ার মুখ আছে? তার ইন্টারভিউ করা মানে তাকে নরমালাইজ করা? এটা এথিক্সের (সাংবাদিকতার নীতি) মধ্যে আটকাবে?
খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, পৃথিবীর কোন সাংবাদিক আছেন, যিনি এখন শেখ হাসিনার ইন্টারভিউ নিতে চাইবেন না? সি ইজ দ্য মোস্ট শর্ট আফটার পারসন (তার বিষয়ে উৎসাহ আছে) এখন ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য। কারণ, তাকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে, ১৪০০ খুন তিনি কোথা থেকে করলেন? এই কথা বলার জন্য পুরো স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল আমি খারাপ!
এ সময় তিনি তাকে প্রশ্ন করা কয়েক সাংবাদিকের জ্ঞানবোধ নিয়েও কথা বলেন। খালেদ বলেন, ‘সাংবাদিকরা আসছে আমাকে জ্ঞান দিতে। আমি একশবার বলবো, শেখ হাসিনার ইন্টারভিউ এখন কোন সাংবাদিক নিতে চাইবেন না? খালেদ মুহিউদ্দীনের আজকের বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে অনেকে মন্তব্য করছেন, তিনি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে প্রশ্নের জবাব দেন।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেওয়া একজন বলেন, ‘আপনি শেখ হাসিনাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।’ উত্তরে খালেদ পাল্টা প্রশ্ন করেন, তিনি কি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নন? অনেকে বলছেন, শেখ হাসিনাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ বলা মানে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া। এখনকার রাষ্ট্রপতি তো তারই নিয়োগপ্রাপ্ত। আমি যদি একবার রেফারেন্সে বলি, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইন্টারভিউ করতে চাই’, এতে আমার বক্তব্যের মূল অর্থ বদলায় না।
আলোচনার শেষ দিকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, ‘এগুলো নরমালাইজ করে কী হবে? শেখ হাসিনা আইসা বইসা পড়বেন? আমি তো বললাম, ৫০০ ইন্টারভিউ দিলেও তাকে নরমালাইজ করা যাবে না। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, প্রতিদিন ৫০টা এ রকম ইন্টারভিউ দিতেন, ৫০০ বার প্রচার হতো। তবু কি জনগণ তাকে গ্রহণ করেছে? না। জনগণ সব জানে।'
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেওয়ার ইচ্ছা প্রসঙ্গে এর আগে খালেদ মুহিউদ্দীন মার্কিন গণমাধ্যমের উদাহরণ টেনে বলেছিলেন, অনেকেই তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ কারো সাক্ষাৎকার প্রকাশের কথা বললেও, তারা এর কোনো উদাহরণ দেখাতে পারেননি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নিষিদ্ধ কারো ইন্টারভিউ কোনো মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, 'এখন যদি আমাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্টারভিউ দিতে চান, এটা যদি আইনে কভার না-ও করে, তাহলেও তার ইন্টারভিউ নেব।'
খবরটি শেয়ার করুন