বৃহস্পতিবার, ৩রা জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি জাতীয় সংসদ ছাড়া কেউ করতে পারবে না: আমীর খসরু *** তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব দল একমত: আলী রীয়াজ *** পার্বত্য চট্টগ্রামের ১০০ স্কুলে এ বছরই ই-লার্নিং চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার *** এনবিআরের তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসর *** প্রথমবার নারী এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ *** অপতথ্য মোকাবিলায় জাতিসংঘকে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার *** সবজি সংরক্ষণে ১০০ হিমাগার নির্মাণ করছে সরকার *** বিপিএলের দল বাছাই আগস্টে, ড্রাফট অক্টোবরে *** দালাই লামার মৃত্যুর পর একজন উত্তরসূরি থাকছেন *** প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে পোস্ট দেওয়া সেই ঊর্মি অবশেষে...

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিফর্ম নয়, মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:৪০ অপরাহ্ন, ২৮শে জানুয়ারী ২০২৫

#

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য নির্বাচিত নতুন পোশাক

সম্প্রতি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের জন্য নতুন ইউনিফর্মের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তিন বাহিনীর ইউনিফর্ম বদল নিয়ে সরকারের যুক্তি হলো– বাহিনীগুলোকে ঢেলে সাজাতে প্রতীকী এই পরিবর্তন। বাহিনীর সদস্যদের মন-মানসিকতা পরিবর্তন করা জরুরি। সে লক্ষ্যে পোশাক পরিবর্তন করা হচ্ছে।

পুলিশের নতুন পোশাক হচ্ছে আয়রন বা লোহার রঙের; র‍্যাবের অলিভ বা জলপাই এবং আনসারের পোশাক হচ্ছে গোল্ডেন হুইট বা সোনালি গমের রঙের। এই তিন বাহিনীর মধ্যে পুলিশ জনগণের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। মূলত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়েছে। এখনো পুলিশ স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারেনি। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও সে সময় পুলিশ বাহিনীর যে সব সদস্য নিহত হয়েছেন, তাদের কথা কেউ বলছে না। অথচ পুলিশকে জনগণের শত্রুতে পরিণত করা হয়েছে। ৫ই আগস্টের পর প্রায় এক সপ্তাহ কোনো পুলিশ সদস্যকে মাঠে দেখা যায়নি। থানাগুলো আন্দোলনের সময় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। পুলিশ যে জনগণের কতটা প্রয়োজন সেটা এক সপ্তাহেই জনগণ টের পেয়েছিল। একটি পুলিশবিহীন রাষ্ট্র কতটা অনিরাপদ ও অকার্যকর। একটি বাহিনীর সব সদস্য তো আর খারাপ হতে পারে না। দু-একজনের ব্যক্তিগত দায় গোটা পুলিশ বাহিনীর ওপর বর্তায় না। কিন্তু দু-একজনের দায় গোটা পুলিশ বাহিনীর ওপর চাপানো হচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশকে কাজে ফেরানোর জোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই মতামত দেন, পুলিশের মনোবল বাড়াতে তাদেরকে ঢেলে সাজাতে হবে। তারই অংশ হিসেবে পোশাক ও লোগো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক দুইভাবে নির্ধারণ করা হয়। বেশিরভাগ সময় দেশ-কালের ওপর ভিত্তি করে সেবা সংস্থাগুলোর পোশাক নির্ধারণ করা হয়। যেমন, শীতপ্রধান দেশগুলোর পুলিশের পোশাক কালো রঙের হয়। সেখানে তাপমাত্রা ধরে রাখার বিষয়টা পোশাকে যুক্ত থাকে। গরম বা নাতিশীতোষ্ণ দেশগুলোতে পুলিশের পোশাক সাদা, খয়েরি বা হালকা রঙের দেখা যায়। যার দ্বারা তাপ শোষণ কম হয়। বাংলাদেশ, ভারতসহ এই অঞ্চলে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসের কারণে বিভিন্ন সেবা সংস্থার পোশাক খাকি হওয়ার আরেকটি কারণ ছিল।
 
ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তন করলেই পুলিশের আচরণ পরিবর্তন হবে না। পুলিশের আমূল সংস্কার করতে হবে। পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। সেই কমিশনের অধীনে পুলিশ পরিচালিত করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর অধীনে থাকবে না। পুলিশকে যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা না হয়– সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

পুলিশের পোশাকের রং বা ডিজাইন যা-ই হোক না কেন সেটা মুখ্য বিষয় নয়। বাহিনীর গুণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো সরকার যেন পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। পুলিশকে রাষ্ট্রের জননিরাপত্তায় কাজ করতে হবে। পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার  রাষ্ট্রের বাহিনী। তারা কোনো ব্যক্তির বা দলের কর্মী নয়– এটি তাদের মাথায় রেখে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আগেও অনেকবার পোশাক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু পুলিশের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাহিনীর সেবার মান ও মানসিকতায় পরিবর্তন আনা না গেলে শুধু পোশাক পরিবর্তন খুব বেশি কাজে আসবে না। পোশাক পরিবর্তন নয়, মানসিকতায় পরিবর্তন জরুরি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য কঠোরভাবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জনগণের বন্ধু হবে, সেটাই প্রমাণ করতে হবে।

আই.কে.জে/

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন