সোমবার, ৩১শে মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপমহাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে কীর্তনের প্রভাব

সাহিত্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:১৫ অপরাহ্ন, ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

রবিউল হক

উপমহাদেশে স্বাধিকার আন্দোলনে কীর্তনের প্রভাব রয়েছে। স্বদেশী গানের বেশিরভাগ ছিল কীর্তনাঙ্গের। উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামলে লর্ড কিংসফোর্ডকে হত্যার ষড়যন্ত্রের দায়ে ক্ষুদিরাম ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল। ক্ষুদিরামের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের  বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নিম্নোক্ত গানে-

‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,

হাসি হাসি পড়বো ফাঁসি 

দেখবে ভারতবাসী/ জগৎবাসী’।।

এ গানের মধ্যে যে আকুল আবেদন রয়েছে তা মূলত কীর্তনাঙ্গের সুরের প্রভাবের কারণেই। যদিও কীর্তন গান ভক্তিমূলক বাণীর প্রকাশে বহুল প্রচলিত। কিন্তু এ ধারা থেকে বের হয়ে মুকুন্দ দাস স্বাধিকার ও বিপ্লবের ধারায় গান রচনা করেন। উদাহরণস্বরূপ-

‘আয়রে বাঙালি আয় সেজে আয়

আয় লেগে যাই দেশের কাজে,

দেখাই জগতে এ ভেতো বাঙালি

দাঁড়াইতে জানে বীর সমাজে’।

অথবা- 

‘আমি দশহাজার প্রাণ যদি পেতাম

তবে ফিরিঙ্গি বণিকের গৌরব রবি

অতল তলে ডুবিয়ে দিতাম’।।

অথবা দ্রুত দাদরা তালে গীত-

‘বান এনেছে মরা গাঙে

খুলতে হবে নাও

তোমরা এখনো ঘুমাও’।

এছাড়া বাংলা সাহিত্যের পঞ্চকবিদের মধ্যে অন্যতম রজনীকান্ত সেনের গানে স্বদেশী দ্রব্য গ্রহণ ও বিদেশী দ্রব্য বর্জনের উদাত্ত আহবান লক্ষ্য করা যায় নিম্নোক্ত গানে-

‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়

মাথায় তুলে নে রে ভাই

দীন দুঃখিনি মা যে তোদের 

তার বেশি আর সাধ্য নাই’।।

আরো পড়ুন : বইমেলায় রণজিৎ সরকারের দুইটি বই

একজন ব্রিটিশ শাসকের বর্বরতার উল্লেখ পাওয়া যায় যেখানে সেই শাসকের চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গানটির নমুনা নিম্নরূপ-

‘দেখে এলাম কলকাতায় কার্জন পার্কের অনশন মেলায়

সেথায় মাথা প্রতি দশটাকা নাম লিখলেই পাওয়া যায়

ধনীদের পা চাটা কুকুর সেথা জমেছে প্রচুর

নাম অনশন কীর্তন গাইছে সুমধুর

ঐ মার্কসবাদীদের কুৎসা কীর্তন কী সুমধুর শোনা যায়’।।

স্বাধিকার আন্দোলনে মুকুন্দ দাসের কীর্তনের ব্যাপক প্রভাব ছিল বলেই তার কীর্তনের সুর বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তার রচিত ছাত্রজাগরণের গান ও ভোটের গানে কীর্তনের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। যেমন-

‘চলরে জোয়ান একসাথে

দেশের বর্তমান ভবিষ্যত কাঁধে পরিয়ে বিভেদের ফাঁদে

প্রগতির স্রোত বালির বাঁধে পারি কি ঠেকাতে?

অপর গানে নির্বাচনী ভোট সম্পর্কে ঈঙ্গিত লক্ষ্য করা যায়-

‘এলো নির্বাচন হুঁশিয়ার ভাই দেশের বন্ধুগণ

নীতি ছাড়া পকেটমার সে তা পাইবা অনেক জন’।

উপরোক্ত গানগুলোয় কীর্তনের প্রভাব রয়েছে এবং তাতে স্বাধিকার আন্দোলন ও বিদ্রোহের ছাপ সুস্পষ্ট।

তথ্যসূত্র

১. ড. মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী, ভাষা ও দেশের গান, অনুপম প্রকাশনী, ঢাকা ২০০৫

২. খগেশ কিরণ তালুকদার, নিবারণ পণ্ডিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা ১৯৯০

৩. ড. সাইম রানা, বাংলাদেশে গণসংগীত: বিষয় ও সুরবৈচিত্র্য, বাংলা একাডেমি, ঢাকা

এস/ আই.কে.জে/ 


কীর্তন

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন