শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেয়েদের উত্তরাধিকারের আয়াত কীভাবে নাজিল হলো?

ধর্ম ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:৪৫ অপরাহ্ন, ৩০শে জুন ২০২৪

#

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

ইসলাম-পূর্বকালে আরব ও অনারব জাতির মধ্যে দুর্বল শ্রেণী, এতিম বালক-বালিকা ও অবলা নারী জুলুম-নির্যাতনের শিকার ছিল। 

প্রথমত— তাদের কোনো অধিকারই স্বীকার করা হতো না। কোনো অধিকার স্বীকার করা হলেও পুরুষের কাছ থেকে তা আদায় করে নেয়ার সাধ্য কারো ছিল না। ইসলামই সর্বপ্রথম তাদের ন্যায্য অধিকার প্রদান করে। এরপর সব অধিকার সংরক্ষণেরও চমৎকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। 

তৎকালীন সময়ে উত্তরাধিকার আইনেও নারী-পুরুষকে তাদের স্বাভাবিক ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। 

আরবদের নিয়মই ছিল এই যে, যারা অশ্বারোহন করে এবং শক্রদের মোকাবিলা করে তাদের অর্থ-সম্পদ লুট করার যোগ্যতা রাখে, তারাই শুধু উত্তরাধিকারের যোগ্য হতে পারে। 

বালক-বালিকা ও নারী উভয় প্রকার দুর্বল শ্রেণী এ নিয়মের আওতায় পড়ে না। তাই তাদের নিয়ম অনুযায়ী শুধু যুবক ও বয়ঃপ্রাপ্ত পুত্রই ওয়ারিশ হতে পারত। কন্যা কোনো অবস্থাতেই ওয়ারিশ বলে গণ্য হত না, প্রাপ্ত বয়স্কা হোক কিংবা অপ্রাপ্ত বয়স্কা।

পুত্র সন্তানও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে সে উত্তরাধিকারের যোগ্য বলে বিবেচিত হত না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়কালে একটি ঘটনা সংঘটিত হলো—

গর্ভবতী স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন সাদ ইবন রবী রাদিয়াল্লাহু আনহু। জাহেলি যুগের নিয়ম অনুযায়ী তার ভাই এসে তার সমস্ত সম্পত্তি দখল করে নিলেন।

তখন সাদ ইবন রবী রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন—

হে আল্লাহর রাসূল! এরা সাদ ইবন রবীর কন্যা। তাদের বাবা আপনার সাথে উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। আর তাদের চাচা তাদের সমস্ত সম্পদ নিয়ে গেল। তাদের জন্য কোনো সম্পদই বাকী রাখল না, অথচ সম্পদ না হলে তাদের বিয়েও হয় না। 

আরো পড়ুন : স্ত্রীর সঙ্গে যেভাবে মানিয়ে চলতে বলেছেন নবীজি (সা.)

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন—আল্লাহ তায়ালা ওদের ব্যাপারে ফয়সালা করবেন। 

এরপর সূরা নিসার ১১তম আয়াতে মেয়েদের মীরাস সম্পর্কিত বিধান নাজিল করে আল্লাহ তায়ালা বলেন—

 یُوۡصِیۡكُمُ اللّٰهُ فِیۡۤ اَوۡلَادِكُمۡ ٭ لِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ الۡاُنۡثَیَیۡنِ ۚ فَاِنۡ كُنَّ نِسَآءً فَوۡقَ اثۡنَتَیۡنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ ۚ وَ اِنۡ كَانَتۡ وَاحِدَۃً فَلَهَا النِّصۡفُ ؕ وَ لِاَبَوَیۡهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنۡهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ اِنۡ كَانَ لَهٗ وَلَدٌ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یَكُنۡ لَّهٗ وَلَدٌ وَّ وَرِثَهٗۤ اَبَوٰهُ فَلِاُمِّهِ الثُّلُثُ ۚ فَاِنۡ كَانَ لَهٗۤ اِخۡوَۃٌ فَلِاُمِّهِ السُّدُسُ مِنۡۢ بَعۡدِ وَصِیَّۃٍ یُّوۡصِیۡ بِهَاۤ اَوۡ دَیۡنٍ ؕ اٰبَآؤُكُمۡ وَ اَبۡنَآؤُكُمۡ لَا تَدۡرُوۡنَ اَیُّهُمۡ اَقۡرَبُ لَكُمۡ نَفۡعًا ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلِیۡمًا حَكِیۡمًا

অর্থ : 

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিছ হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা, আয়াত : ১১)

এই আয়াত নাজিলের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের চাচার কাছে লোক পাঠিয়ে বললেন—

তুমি সাদ-এর কন্যাদ্বয়কে দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ এবং তাদের মা-কে এক-অষ্টমাংশ দিয়ে দাও। আর যা বাকী থাকবে তা তোমার। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৯১, ২৮৯২, তিরমিজি, হাদিস :২০৯২, ইবন মাজাহ, হাদিস : ২৭২০)

অন্য এক বর্ণনায় ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, তখনকার সময়ে সম্পদ শুধু ছেলেকেই দেয়া হত আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়ত করার নিয়ম। তারপর আল্লাহ তায়ালা তা পরিবর্তন করে যা তিনি পছন্দ করেন তা নাজিল করলেন এবং ছেলেকে দুই মেয়ের অংশ দেন আর পিতা-মাতা প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ও তিন ভাগের এক নির্ধারণ করেন। স্ত্রীর জন্য আট ভাগের এক ও চার ভাগের এক নির্দিষ্ট করেন। স্বামীকে অর্ধেক অথবা চার ভাগের এক অংশ দেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৫৭৮)

এস/ আই.কে.জে/

কোরআন

খবরটি শেয়ার করুন