সোমবার, ২০শে জানুয়ারী ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাবিতে ছাত্রীদের আবাসন ভাতা নিঃসন্দেহে শুভ উদ্যোগ

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:৩৬ অপরাহ্ন, ২০শে জানুয়ারী ২০২৫

#

প্রতীকী ছবি - সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক ছাত্রীদের জন্য আবাসন ভাতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে আবাসন সংকটের কারণে যেসব ছাত্রী হলে সিট পাওয়ার যোগ্য হয়েও থাকতে পারছেন না তাদের অস্থায়ী আবাসন–সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, যারা হলে সিট পাওয়ার যোগ্য কিন্তু সংকটের কারণে সিট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাসিক তিন হাজার টাকা করে আবাসন ভাতা দেয়া হবে।

নারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলে খাওয়ার সমস্যা, যাতায়াতের সমস্যা, পানির সমস্যার কারণে মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় তারা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নিরাপত্তা নিয়েও থাকে নানা ধরনের শঙ্কা। তার ওপর অতিরিক্ত খরচ তো আছেই, যা তাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এসব কারণে ছাত্রীরা বেশ কিছুদিন ধরে আবাসন সংকট নিরসনে আন্দোলন করছিলেন।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেন। তাদের স্লোগান ছিল,‘হলে যদি সিট না পাই, ভিসির বাংলোয় ঠাঁই চাই', 'ক্লাসরুমে আনার আগে, থাকার জায়গা দিতে হবে’।  ছাত্রীদের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি পেশ করা হয়- ১. প্রথম বর্ষেই শতভাগ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ২. অবিলম্বে গণরুম বিলুপ্ত করা। অমানবিক ও অস্বাস্থ্যকর গণরুম–প্রথা তুলে নিয়ে পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ৩. নতুন ছাত্রী হল চালু না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রীদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন ভবনে বা ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে ছাত্রীদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা। ৪. ছাত্রীদের নতুন হল বাধ্যতামূলকভাবে মূল ক্যাম্পাসের ভেতরেই নির্মাণ করা এবং দ্রুত নির্মাণকাজ দৃশ্যমান করা । ৫. অনতিবিলম্বে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সুবিধা নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক ছাত্রীদের হল কার্ড জমাদানপূর্বক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যেকোনো হলে প্রবেশ এবং ডাইনিংসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণের অনুমতি দেয়া। ৬. ক্রমান্বয়ে প্রতিটি হলে ডাবলিং ব্যবস্থা তুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ৭. নতুন ভবনে স্থানান্তরের মাধ্যমে মৈত্রী এবং বঙ্গমাতা হলকে ধারাবাহিকভাবে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১২ বছরের শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ছাত্রী ভর্তির হার দিন দিন বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ দুই শিক্ষাবর্ষে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী ভর্তির হার ছিল বেশি। কিন্তু সেই বিবেচনায় তাদের জন্য আবাসন সুবিধা বাড়েনি। ফলে বর্তমানে অধ্যয়নরত প্রায় ৫৭ শতাংশ ছাত্রী হলে সিট না পেয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই তুলনায় ছাত্রদের অবস্থা ভালো। তাদের মাত্র ৩৪ শতাংশকে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালে ছাত্রী ভর্তির হার ছিল প্রায় ৩৮ শতাংশ। সেখানে চলতি বছর সেটা ছিল ৫০ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত বছর ছাত্রী ভর্তির হার ছিল আরও বেশি, ৫১ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত ১২ বছরে যে হারে ছাত্রী ভর্তি বেড়েছে, সেই বিবেচনায় আবাসন বাড়ানো হয়নি। সর্বশেষ ২০১২ সালে ছাত্রীদের আবাসনের জন্য কবি সুফিয়া কামাল হল উদ্বোধন করার পর আর কোনো হল নির্মাণ হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল আছে মোট ১৯টি। এর মধ্যে ছাত্রদের হল ১৩টি, ছাত্রীদের হল ৫টি এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১টি হল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৪০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ২১ হাজার ছাত্রের জন্য ১৩টি হল, বিপরীতে ১৯ হাজার ছাত্রীর জন্য ৫টি হল আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন বৈষম্য মোটেও কাম্য নয়। ছাত্রীদের আবাসন ভাতা নিঃসন্দেহে শুভ উদ্যোগ। তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। দ্রুত নারীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণ করে সিট সমস্যার সমাধান করা হোক।

আই.কে.জে/ 

ছাত্রীদের আবাসন ভাতা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন