সোমবার, ১লা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোরআন পড়তেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন, কিন্তু কেন?

ধর্ম ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:১৯ অপরাহ্ন, ৪ঠা জুন ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

উত্তর আমেরিকায় ১৬ শতকেই ঝাণ্ডা গাড়ে ইসলাম ধর্ম। তার আরও পরে অর্থাৎ ১৭ শতকে ইংল্যান্ড ও তার আমেরিকান উপনিবেশে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন।

ওই সময় সেখানে কোরআনের ইংরেজি অনুবাদ বেস্ট সেলার অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বই ছিল। খ্রিষ্টানদের মাঝে জনপ্রিয়তা পাওয়া কোরআনের একজন পাঠক ছিলেন সাবেক এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের লেখক ও দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র লিখেছেন। তারই ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল কোরআনের একটি কপি।

২০১৯ সালে তার সেই কোরআনের কপি ব্যাপক আলোচনায় আসে। তখন কংগ্রেসে নির্বাচিত হওয়া প্রথম দুই মুসলিম নারীর একজন রাশিদা তালিব ওই কোরআন ছুঁয়ে শপথ নিতে চেয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত রাশিদা নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

কয়েকশ’ বছরের পুরোনো কোরআন ছুঁয়ে শপথের ঘটনা মার্কিন কংগ্রেসে নতুন নয়। প্রথম মুসলিম কংগ্রেসম্যান কেইথ এলিসন ২০০৭ সালে কয়েকশ বছরের পুরোনো কোরআন ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলেন।

আরো পড়ুন : জানা গেলো ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ

জেফারসনের কাছে কোরআনের কপি কীভাবে এলো সে ঘটনা নিয়ে ‘থমাস জেফারসন’স কোরআন: ইসলাম অ্যান্ড দ্য ফাউন্ডারস’ নামে একটি বই লিখেছেন অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের ইতিহাসের অধ্যাপক ডেনিস এ. স্পেলবার্গ।

স্পেলবার্গ তার বইয়ে লেখেন, কৌতূহল থেকে ইংল্যান্ড ও উত্তর আমেরিকার প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে কয়েকশ’ বছর আগেই কোরআন পাঠ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে এর বাইরেও কারণ ছিল। আইনের একটি বই এবং মুসলিমদের বোঝার জন্যও এই বইয়ের কদর বেড়ে গিয়েছিল সেই সময়। কারণ ততদিনে অটোমান সাম্রাজ্য এবং উত্তর আফ্রিকার মুসলিমদের সঙ্গে ইংল্যান্ড ও উত্তর আমেরিকার খ্রিষ্টানদের মিথষ্ক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।

জেফারসন ১৭৬৫ সালে আইনের ছাত্র থাকা অবস্থায় কোরআন কেনেন। সম্ভবত অটোমানদের আইন-কানুন বোঝার জন্যই কোরআন কিনেছিলেন তিনি। আবার বিভিন্ন ধর্মের মানুষের স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দেওয়ার মনোভাব থেকেও এমনটা ঘটে থাকতে পারে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, জেফারসনের মতো ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত অন্যদের তখনো জানা ছিল না যে, অটোমান সাম্রাজ্যের বাইরে আফ্রিকায়ও ছড়িয়ে গিয়েছিল ইসলাম। আফ্রিকা থেকে আনা তাদের ক্রীতদাসরাও যে ইসলাম ধর্মেরই অনুসারী তা-ও জানা ছিল না ইউরোপীয়দের।

১৭৩৪ সালে ব্রিটিশ আইনজীবী জর্জ সেল কোরআনের অনুবাদ করেছিলেন। জেফারসন সেই অনুবাদের কপিই কিনেছিলেন। এটি আরবি থেকে ইংরেজিতে প্রথম সরাসরি অনুবাদ করা কোরআনের কপি। ১৮ শতকের শেষদিক পর্যন্ত এটাই ছিল কোরআনের ইংরেজি অনুবাদ। প্রোস্টাস্টান্ট খ্রিষ্টানরা যেন কোরআন বুঝে তর্ক করতে পারে সেজন্য অনুবাদ করেছিলেন সেল। মিশনারি কাজের জন্য অনুবাদ করা হলেও ১৯ শতকের শেষভাগের দিকে আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্যে খ্রিষ্টান মিশনারি কার্যক্রম শুরু হয়।

জেফারসনের সময়কালে ব্রিটেন ও উত্তর আমেরিকার ইংরেজি ভাষাভাষীদের কাছে কোরআনের আবেদন ধর্মান্তরিতকরণের উদ্দেশ্যকে ছাপিয়ে যায়। ১৮ শতকের খ্রিষ্টানরা ইসলাম সম্পর্কে জানার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই ২০০ পৃষ্ঠার সূচনা সত্ত্বেও সেলের অনুবাদ করা কোরআন বেস্টসেলার ছিল। আর জেফারসনের কোরআনের কপি ছুঁয়ে শপথ নিতে চাওয়ার মাধ্যমে রাশিদা ও কেইথ বোঝাতে চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং ইসলাম আমেরিকায় বহিরাগত কোনো ধর্ম নয়।

এস/ আই.কে.জে/

কোরআন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

খবরটি শেয়ার করুন