ছবি - সংগৃহীত
বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় জায়গার অন্যতম হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপ। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে নয় কিলোমিটার দক্ষিণে নাফ নদীর মোহনায় দ্বীপটি অবস্থিত। গবেষকরা বলেছেন, একসময় এটি টেকনাফে মূল ভূ-খণ্ডের অংশ ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে সমুদ্রের নিচে চলে যায়। এরপর সাড়ে চারশ বছর আগে দ্বীপটি জেগে ওঠে। আর শত বছর আগে বর্তমান দ্বীপটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বাণিজ্যের সময় আরব বণিকরা দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিতো। তখন তারা এর নামকরণ করেছিল জাজিরা। পরবর্তীতে দ্বীপটি ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
দেশের একমাত্র ও অনন্য সুন্দর প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন এখন মুখ্য আলোচনার বিষয়। দীর্ঘ এই দ্বীপটিকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। জীববৈচিত্র্য ও পর্যটনসহ নানাবিধ কারণে অনেক আগে থেকেই এই দ্বীপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি ভূ-রাজনীতিতেও এই অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণে দ্বীপটির গুরুত্ব কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
দক্ষিণ এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে নজরদারির স্বার্থে বিশ্বের সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা সেন্টমার্টিনকে নিয়ে। সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আরো বেড়েছে। এ কারণে দ্বীপটি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে আনুষ্ঠানিক কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। নভেম্বর থেকে পর্যটকরা যেতে পারবেন, কিন্তু কেউ সেখানে থাকতে পারবেন না। এটা বলা হলেও বর্তমান বাস্তবতা হলো, দ্বীপের বাসিন্দা ছাড়া কেউ সেখানে বেড়াতে যেতে পারছে না, তাদেরকেও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। এমনকি আত্মীয় স্বজনরাও বেড়াতে যেতে পারছেন না। যাতায়াতের জন্য এখনো পর্যটনবাহী জাহাজ ও স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়নি। যাত্রীবাহী ট্রলার বা সার্ভিস বোট চলাচল করলেও ভ্রমণ করতে লিখিত অনুমতি লাগছে। দ্বীপের বাসিন্দা কিনা সেটা নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ট্রলারের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। দফায় দফায় কোস্টগার্ড যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করছে।
পর্যটক ভ্রমণের সব ব্যবস্থা এখনো বন্ধ রয়েছে। পর্যটন ব্যবসায়ী ও দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এমন কড়াকড়ি কখনো ছিল না। এখন যেটি হচ্ছে সেটি গুজব সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করছে। সবার ভেতর একটি অনিশ্চয়তা কাজ করছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, একচল্লিশ ভাগ প্রবাল ক্ষয় হয়ে গেছে। এটা জাতীয় পরিসংখ্যান। আন্তর্জাতিক সকল গ্রহণযোগ্য জার্নালে বলা হয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সকল প্রবাল ক্ষয় হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ডুবে যাবে। তখন পর্যটন কোথায় যাবে? আগে সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্য অবৈজ্ঞানিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত বলে মন্তব্য করেছে, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’(সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ছাত্র আন্দোলন)। তারা বলেছেন, উপদেষ্টা মহোদয় কখনও দ্বীপে গিয়েছেন কি না, অথবা গিয়ে কখনও এসব জানার চেষ্টা করেছেন কি না সেটা আমরা জানি না। তবে গিয়ে থাকলে এমন অবাস্তব কথা তিনি বলতে পারতেন না। এছাড়া সাধারণ জনগণও পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্য বিশ্বাস করতে পারছেন না।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘এখনও যদি বলি, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নেই, আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না। আমাদের দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, সেটি হতে দেব না।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে স্যোশাল মিডিয়াসহ সর্বত্র ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। পর্যটক প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে মানুষের মনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশঙ্কা দানা বাঁধছে। শুধু পর্যটকই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল বাড়ছে। জনমানুষের সন্দেহ-শঙ্কা সরকারকেই দূর করতে হবে।
আই.কে.জে/