শুক্রবার, ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** গোপালগঞ্জে সহিংসতা: তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়ল ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত *** প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের সাক্ষাৎ, নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি *** নুরের ওপর হামলা তদন্তে তিন সদস্যের কমিশন গঠন *** পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আজ থেকে বর্ণাঢ্য আয়োজন *** দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত তারেক রহমানকে নিতে হবে, দরকার হলে ডকুমেন্ট দেবে সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা *** চিরকুমার আরমানির ১০ বিলিয়ন ডলারের ফ্যাশন সাম্রাজ্য এখন কার *** গাজীপুরে বাড়ল ১ আসন, কমল বাগেরহাটে *** দুবাইয়ে ১২০০ কোটি টাকা পাচার: সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা সিআইডির *** মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগপত্র দাখিল হলেই নির্বাচনের অযোগ্য হবেন, সরকারি চাকরিও থাকবে না *** জনপ্রিয় টিভি অভিনেতা আশিস কাপুর যে কারণে গ্রেপ্তার

ভয় দেখিয়ে দেওয়া হয় টাকা, ‘খাসির খানা’ হচ্ছে না

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২৫

#

ঘটনাস্থলে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় পাহাড়িয়াদের ভয় দেখিয়ে টাকা দেন সাজ্জাদ আলী। তিনি বলেছিলেন, পাহাড়িয়ারা যদি থানা-পুলিশে দৌড়াদৌড়ি করেন, তাহলে যে টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেটাও দেওয়া হবে না। আজ বৃহস্পতিবার (৪ঠা সেপ্টেম্বর) সকালে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী ওই মহল্লায় গেলে সবার সামনে পাহাড়িয়ারা এমন অভিযোগ করেন।

গতকাল বুধবার সুখবর ডটকমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়, ‘শুক্রবার খাওয়ানো হবে খাসি জবাই করে, রোববার ছাড়তে হবে ঘর’ শিরোনামে। এগুলোতে উঠে আসে, ৫৩ বছর ধরে পাহাড়িয়ারা ১৬ কাঠা জমির ওপর বাস করে আসছেন। এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ আলী এত দিন পর এ জমির মালিকানা দাবি করছেন। তার চাপে তিনটি পরিবার জায়গা ছেড়ে চলে গেছে।

জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক উপদেষ্টা রাজশাহীর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আজ টেলিফোনে নির্দেশ দেন পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের জায়গা দখল ঠেকাতে। এর পর তৎপর হয় পুলিশ-প্রশাসন। আজ সকালে পাহাড়িয়াদের মহল্লায় যান পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার লোকজন। পুলিশের একটি দল নিয়ে আসেন কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী। তিনি সাজ্জাদ আলীকেও ফোন করে ডেকে আনেন।

ওসি আজিজুল বারী পাহাড়িয়াদের প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কেন থানায় যাননি?’ জবাবে ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ‘সাজ্জাদ আলী বলেছেন যে তোমরা যদি বাড়াবাড়ি করো, যেটুকু টাকা দিচ্ছি, সেটাও দিব না। এটার জন্য আমরা কোনো জায়গাতে যেতে পারলাম না। আমরা টাকা নিতে বাধ্য হলাম।’

আরও একজন বলেন, ‘এখানে জন্মজায়গা। আমরা যদি এখানে থাকতে পারি, থাকতে চাই। জন্মজায়গা ছেড়ে কেউ চলে যেতে চায়? কেহু তো চাই না। কিন্তু আমরা কুনু জাগাতেই যাইনি। আমাদেরকে বুলেছে, তোমরা যুদি হাঁটাহাঁটি করো, তাহিলে কুনু টাকাই পাবা না।’

এলাকার বাসিন্দা আসাদ আলী পুলিশের সামনেই বললেন, ‘এখানে তারা ৬২ বছর ধরে বাস করছেন। এই জমির মালিক ইন্দ্রা ধোপা। সাজ্জাদের কথা আমরা শুনিনি।’ সেখানে ছিলেন সাজ্জাদ আলীর কেয়ারটেকার মো. শাহীন। ওসি আজিজুল বারী সাজ্জাদকে কয়েকবার ফোন করান তাকে দিয়ে। একপর্যায়ে একটি দলিল হাতে আসেন সাজ্জাদ। তিনি দাবি করেন, এ জায়গা তিনি ১৯৯৪ সালে কিনেছেন। পুনর্বাসন করে জায়গা দখলে নিচ্ছেন।

খাসি জবাই করে খাওয়ার আয়োজনের বিষয়ে সাজ্জাদ বলেন, ‘তারা এখানে এত দিন ছিল। চলে যাচ্ছে। আমি তাদের মুরগি খাওয়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারাই বলেছে যে, খাসি খাওয়াতে হবে।’ তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আগামীকাল শুক্রবার কোনো ‘খাওয়া’ হবে না সেখানে। এ সময় বিভিন্ন মানবাধিকার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারাও সেখানে আসেন।

ওসি আজিজুল বারী জানান, বিষয়টি তার কাছে ঢাকা থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিটি বাড়ির তালিকা করে নেন। তিনি ১৩টি পরিবার থেকে ১৩ জন এবং সাজ্জাদ আলীকে বিকেল ৫টায় কাশিয়াডাঙ্গা জোনের উপপুলিশ কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে ডাকেন। ওই সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে মোবাইল ফোনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সবকিছু জানান।

ওসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমে জেনে এখানে এসেছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে তারা কখনো আগে থানায় যাননি। নিউজ হওয়ার পরে আপনারা এসেছেন, আমরাও এসেছি। আমরা সকলে মিলে যেটা সুষ্ঠু সমাধান হয়, সেটা করব। যেটাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না, সেটা করব। আপাতত এখানকার বাসিন্দারা এভাবেই থাকবেন। জমির কাগজপত্র চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাহাড়িয়াদের দাবি, এ জমির মালিক ছিলেন ইন্দ্রা ধুপি নামের একজন ধোপা। মুক্তিযুদ্ধের পর ভারত থেকে ফিরে আসা ছয়টি পাহাড়িয়া পরিবারকে তিনি এখানে বাড়ি করতে দেন। জায়গাটি তখন ইন্দ্রা ধুপার বাথান নামে পরিচিত ছিল। ইন্দ্রা ধুপা নিঃসন্তান ছিলেন।

ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, হড়গ্রাম মৌজায় ৫১ নম্বর জে এল ও ১২৯০ নম্বর দাগে জমিটির পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৯৪ শতক। ৪০৫ নম্বর আরএস খতিয়ানে জমিটির মালিক হিসেবে লেখা রয়েছে রাজশাহীর কাজীহাটা এলাকার গাজিয়া রজকিনি ও ময়মনসিংহের কোতোয়ালির মনিতারা রজকিনি।

তবে ১৯৯৪-৯৫ সালে এ জমি খারিজ হয়েছে সাজ্জাদ আলী, সৈয়দ আলী, ইমতিয়াজ ও ফাহামিদার নামে। সাজ্জাদ আলী পুলিশের সামনে যে দলিল হাজির করেন, সেখানে দেখা যায়, মধুসূদন দাস, দিলীপ দাস, আমমোক্তার সূর্য কমল দাস, প্রকাস দাস ও তৃপাল রজকের কাছ থেকে তারা কিনেছেন।

ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, আরএস রেকর্ডে গাজিয়া রজকিনি ও মনিতারা রজকিনির কাছ থেকে সাজ্জাদের কাছে সরাসরি দলিল হলে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু মধুসূদন দাস, দিলীপ দাস, আমমোক্তার সূর্য কমল দাস, প্রকাস দাস ও তৃপাল রজকের নামে জমি কীভাবে হয়েছিল, আগে সে দলিল দরকার। ওই দলিল না পাওয়া গেলে সাজ্জাদের কাছে থাকা দলিল প্রশ্নবিদ্ধ। এ দলিল সঠিক কি না, সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে।

পাহাড়িয়া সম্প্রদায়

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন