ছবি: সংগৃহীত
সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, আমেরিকার স্বনামধন্য সংবাদ সংস্থা এপিতে (অ্যাসোসিয়েট প্রেস) একটি নাতিদীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা এবং অন্যান্য যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে জয়ের সেই সাক্ষাৎকার নিয়ে ইতিবাচক বিচার-বিশ্লেষণ এবং নানা রকম মন্তব্য করেছে।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দেওয়ার মতো বিরল সৌভাগ্য আমাদের এই রাজনৈতিক অঙ্গনে কতজনের হয়েছে, এটা আমি বলতে পারব না। তবে সমসাময়িককালে যদি জামায়াতের আমির, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কিংবা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, এনসিপির নাহিদ ইসলাম অ্যাসোসিয়েট প্রেসে একটি সাক্ষাৎকার দেন আর সেই সাক্ষাৎকার নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট, ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান, বা কানাডার প্রধানতম পত্রিকাগুলো তা নিয়ে লিড নিউজ করবে; এটা কল্পনাই করা যায় না।
গত বৃহস্পতিবার (২৩শে অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) একটি সাক্ষাৎকার দেন সজীব ওয়াজেদ জয়। জুলাই আন্দোলনে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সরকারের কিছু ভুল ছিল বলে তিনি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন। তার বক্তব্য নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দেশের কূটনীতিক ও প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই প্রথম জুলাই–আগস্টের (২০২৪ সালের) আন্দোলনে যে গণহত্যা চলেছে, সেই বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন ১ হাজার ৪০০ নন, ৮০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তার মানে দাঁড়ায় যে, জয় ১ হাজার ৪০০ নন, ৮০০ মানুষকে যে তাদের সরকার হত্যা করেছে, সেটা স্বীকার করে নিলেন।
নিজের ইউটিউব চ্যানেল গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয়ের মধ্যে কতগুলো পরস্পর বিরোধী ক্যারেক্টারিস্টিক রয়েছে। আমি যেহেতু তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, এ কারণে এ কথাগুলো বলতে পারছি। প্রথমত হলো ইন্টেলিজেন্স। এটা তার যে লেভেলে আছে, এটা আমাদের এভারেজ মেধার লেভেল না। আমাদের দেশে ধরুন যারা নেতা আছেন—শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, শফিকুর রহমান আছেন, এমনকি ড. ইউনূস। মানে তাদের সবারই আইকিউ লেভেল, আপনার আমার সঙ্গে ১৯-২০ পার্থক্য।’
তিনি বলেন, ‘আইকিউ বলতে যে জিনিসটি বোঝা যায়, সেটি ৯ এর ওপরে উঠলে সেটার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য হয়ে যায় এবং সেই বৈশিষ্ট্যের কারণে যাদের আইকিউ লেভেল ৯-এর ওপরে তারা অনেকটা নির্লিপ্ত। দুনিয়ার কোনো কিছুর প্রতি তাদের কোনো লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা, ক্রোধ ইত্যাদি কোনো কিছুই কাজ করে না। সজীব ওয়াজের জয়ের যে আইকিউ লেভেল, এটি ৯ এর ওপরে, আমি এটা লিখে দিতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘এ কারণে আমাদের দৃষ্টিতে যারা সাধারণ মানুষ, কেউ তাকে অটিস্টিক বলার চেষ্টা করেছি, কেউ তাকে পাগল বলার চেষ্টা করেছি, কেউ তাকে বোকা-বেকুব বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আপনি যদি তার ড্রেসকোড দেখেন, অর্থাৎ যখন তিনি স্যুটেড-বুটেড থাকেন, ভালো পোশাক পরেন, তখন আপনি দেখবেন এক্সট্রিম লেভেলে ইট লুকস লাইক বারাক ওবামা, ইট লুকস লাইক যাকে বলা হয় বিল ক্লিনটন, জন এফ কেনেডি।’
তিনি বলেন, ‘এপির মতো একটা প্রতিষ্ঠানে যতই আপনাকে স্ক্রিপ্ট রেডি করে দেওয়া হোক, ধরুন আপনি মিলিয়ন ডলার খরচ করে, লবিং করে এপিকে একটা সাক্ষাৎকার দিলেন। কিন্তু আপনার যদি ইংরেজি জানা না থাকে, ইংরেজিতে আপনি বলতে না পারেন, আপনাকে যারা প্রশ্ন করছে সে প্রশ্নটা আপনাকে বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী আপনাকে রিপ্লাই করতে হবে। তো সেই দিক থেকে সাক্ষাৎকারটি নিঃসন্দেহে তার যে আইকিউ লেভেলের এক্সট্রিম জায়গা, সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে।’
সাবেক সংসদ সদস্য রনি বলেন, ‘সাক্ষাৎকারে জয় যে কথাগুলো বলেছেন, তার চুম্বক অংশগুলো হলো— আওয়ামী লীগকে ছাড়া অর্থবহ, অংশগ্রহণমূলক, ইনক্লুসিভ একটি নির্বাচন হবে না এবং এটিকে একটা ফ্রুটফুল ইলেকশন বলা যাবে না। সংগত কারণে প্রশ্ন আসতে পারে যে, বিএনপিকে ছাড়া যে তিনটি নির্বাচন হয়েছিল সে ব্যাপারে উনি কিছু বলেননি কেন? সেটা তিনি কেন বলবেন? আর এটা বলারই দরকার কি? বিএনপিকে ছাড়া যে ইনক্লুসিভ নির্বাচন হয়নি, এটা তো আওয়ামী লীগ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।'
তার মতে, 'সজীব ওয়াজেদ জয় বলুন আর না বলুন ওটা বাস্তব এবং সেটা থেকেই আওয়ামী লীগ যেভাবে শিক্ষা নিচ্ছে এবং যে কথাগুলো বলছে এই কথার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগকে ছাড়া ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা আমরা বলার চেষ্টা করছি। তাহলে আওয়ামী লীগ আর বর্তমান সরকার আর বিএনপি একই হয়ে গেল না!’
গোলাম মাওলা রনি বলেন, 'হঠাৎ করে কেন জয়ের এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হলো? আর এটা নিয়ে কেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এতটা মাতামাতি শুরু করল? এখানে একটা জিনিস বুঝতে হবে যে আমেরিকা বা পশ্চিমা দুনিয়া অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ম্যাচিউরড। যে ডিপ স্টেটের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলো, তাদের দিয়ে কোনো কাজই হচ্ছে না। তাই হঠাৎ করে সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই অভ্যুত্থান সরকারকে সংগত কারণেই বিচলিত করেছে। সরকারের অনেকগুলো বিষয় নিয়ে এখন সরকারকে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে।’
খবরটি শেয়ার করুন