ছবি: সংগৃহীত
ভারতের দিল্লির লালকেল্লা বিস্ফোরণের মামলার তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বিভিন্ন স্থানে হামলার জন্য ৩২টি গাড়ি বিস্ফোরণের জন্য প্রস্তুত করছিল সন্ত্রাসীরা। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূ্ত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মারুতি সুজুকি ব্রেজা, মারুতি সুইফট ডিজায়ার, ফোর্ড ইকোস্পোর্টসহ মোট ৩২টি গাড়ি নিয়ে হামলার প্রস্তুতি চলছিল। গত সোমবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরিত হুন্দাই আই২০–সহ এসব গাড়িকে একটি ধারাবাহিক ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলায় ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল—যার মধ্যে ৬টি হামলার লক্ষ্য ছিল দিল্লি।
আর অযোধ্যার ষোড়শ শতকের বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার দিন, ডিসেম্বর ৬ তারিখকে হামলার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত শনাক্ত করা গাড়িগুলো পুরোনো এবং বহুবার মালিকানা পরিবর্তন হওয়ায় পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে সবক’টি গাড়ি এখন উদ্ধার হয়েছে।
হরিয়ানার ফারিদাবাদের আল–ফালাহ স্কুল অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রাঙ্গণ থেকে একটি ব্রেজা উদ্ধার হয়েছে।
একটি ফোর্ড ইকোস্পোর্ট গাড়ি বুধবার (১২ই নভেম্বর) রাতে ফারিদাবাদে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, যে এলাকাটি এখন এই সন্ত্রাসী চক্রের অপারেশন ঘাঁটি হিসেবে দেখা হচ্ছে। গাড়িটির পেছনের সিটে ঘুমন্ত অবস্থায় এক তরুণকে পাওয়া গেছে, তাকে আটক করা হয়েছে।
একটি ডিজায়ার গাড়ি সোমবারই জব্দ করা হয়েছিল, যার ভেতর থেকে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও গুলি পাওয়া যায়। লাল রঙের ফোর্ড ইকোস্পোর্টটিই বিস্ফোরক বহন করছিল।
লালকেল্লা বিস্ফোরণে আই২০ ব্যবহার করা হয়, যাতে উচ্চ ক্ষমতার বিস্ফোরক ও অ্যামোনিয়াম–নাইট্রেট ফুয়েল অয়েল ভরা ছিল। তবে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সন্ত্রাসী উমর মোহাম্মদের ভুলে বিস্ফোরণটি পরিকল্পনার আগেই ঘটে।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে উমর মোহাম্মদ ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। আই২০ গাড়িটি সোমবার সকালে বাদারপুর সীমান্ত দিয়ে দিল্লিতে প্রবেশ করে এবং কয়েক ঘণ্টা শহরে ঘোরাফেরা করে।
ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটি লালকেল্লার পার্কিং লটে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। কর্তৃপক্ষ এনডিটিভিকে জানিয়েছে, দীপাবলিতে (২০ অক্টোবর) হামলার কথাও আলোচনায় ছিল।
কিন্তু লালকেল্লা সোমবার জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকায় উমর মোহাম্মদ পরিকল্পনা বদলান। তিনি লালকেল্লার প্রবেশদ্বারের সামনে ব্যস্ত সিগন্যালের কাছে মেট্রো স্টেশনের সংলগ্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটা্ন।
উমর মোহাম্মদ, ওরফে উমর উন–নাবি, সম্ভবত তার সহযোগী আদিল আহমদ রাঠার, মুজাম্মিল শাকিল ও শাহিন সাঈদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
তারা ব্রেজা গাড়িটি চালিয়েছিলেন এবং ফারিদাবাদের আল–ফালাহ হাসপাতাল ও জম্মু–কাশ্মিরের আনন্তনাগের সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় তিন হাজার কেজি বিস্ফোরক ও অস্ত্রভান্ডারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সন্ত্রাসী সেলটি পরিচালিত হচ্ছিল পাকিস্তানভিত্তিক জইশ–ই–মোহাম্মদ গোষ্ঠীর মাধ্যমে। তদন্তের নেতৃত্বে রয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ এবং বিস্তৃত তদন্তে দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের নতুন কৌশল—চিকিৎসকের মতো পেশাদারি পরিচয় ধারণ করে সমাজের আস্থা অর্জন করা ও সন্দেহ এড়ানো।
সেলটির রহস্য ফাঁস হয় যখন সিসিটিভি ফুটেজে রাঠারকে জম্মু–কাশ্মিরের নওগামে জইশকে প্রশংসা করে পোস্টার লাগাতে দেখা যায়।
অল্প দিনের মধ্যেই তাকে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পুরো সন্ত্রাসী পরিকল্পনার জাল খুলতে শুরু করে।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, এই সেলে জড়িত অনেকেই আল–ফালাহ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল বা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটি এখন ওই ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে বলেছে, ‘একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা জাতির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি এবং দেশের প্রতি আমাদের অবিচল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন