মঙ্গলবার, ২০শে মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুদ্ধ নয়, শান্তির পক্ষে বাংলাদেশ

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৬:০০ অপরাহ্ন, ৮ই মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

গত ৭ই মে প্রথম প্রহরে পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে ঢুকে ‘এয়ার-স্ট্রাইক’ করে ভারত। এ আক্রমণের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ‘যুদ্ধের দামামা’ বাজছে। ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২শে এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রথমে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ এবং পরে সীমান্তে দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সবশেষে ভারত ‘এয়ার-স্ট্রাইক’ চালায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আগেও ভারত ও পাকিস্তান বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে জড়ায়। দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিসম্পন্ন প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।

‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের’ তথ্য বলছে, এ মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশে আংশিক, বা পরিপূর্ণ  যুদ্ধ চলছে। কোরীয় উপদ্বীপ, পূর্ব চীন সাগর, দক্ষিণ চীন সাগর, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান বনাম আমেরিকা, ইয়েমেন, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, নাইজেরিয়া, মালি, লিবিয়া, মিসর, ফিলিস্তিন, লেবানন, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, ইউক্রেন, কাজাখস্তান, ভেনেজুয়েলা ও মেক্সিকো ছাড়াও আরও কিছু দেশ ও অঞ্চলে যুদ্ধ চলছে, বা যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতের অন্য সব সময়ের চেয়ে বর্তমানে যুদ্ধ পরিস্থিতির ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। কারণ, এখন শুধু সমরাস্ত্রের লড়াই নয়, পাশাপাশি চলে অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত লড়াই। কিছু লড়াই চোখে দেখা না গেলেও এর প্রভাব জনজীবনে যথেষ্ট বিস্তার করে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ চীনের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যিক লড়াই। এ দুই দেশের বাণিজ্য সংক্রান্ত সংঘাতে গত পাঁচ বছরে বিশ্বের বহু দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে ‘সাপে-নেউলে’ সম্পর্ক বিদ্যমান। তখন থেকে কাশ্মীর ইস্যুতে এ দুই দেশ সবচেয়ে বেশি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়। দেশ ভাগের সময় কাশ্মীর রাজ্যের ভারত বা পাকিস্তানে যুক্ত হওয়া নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের জন্ম দেয়। 

১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ও ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ স্থাপন করা হয়, যা আজও দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু। কাশ্মীর নিয়ে দ্বিতীয় যুদ্ধ হয় ১৯৬৫ সালে। পাকিস্তান ভারতকে অভিযুক্ত করে ‘অবৈধ দখলের’ জন্য। সেপ্টেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যুদ্ধ থামে, সমস্যা থেকে যায়।

পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) স্বাধীনতার জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শুরু করলে পাকিস্তান সামরিক অভিযান চালায়। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর ৩০ লাখের বেশি মানুষের জীবনের বিনিময়ে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

১৯৮৯-৯০ সালে কাশ্মীরে ভারতবিরোধী যুদ্ধ শুরু হলে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণের অভিযোগ তোলে, যা পরবর্তী কয়েক দশক ধরে সংঘাতকে জিইয়ে রাখে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান কারগিল অঞ্চলে ভারতীয় সেনাঘাঁটি দখল করতে গেলে দুই দেশের মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়। আন্তর্জাতিক চাপ ও পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের আশঙ্কার মধ্যে পাকিস্তান পিছু হটে। 

২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হলে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তান ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং এক পাইলটকে আটক করে, পরে ফেরত দেয়।

যে কোনো ধরনের যুদ্ধ বা যুদ্ধ পরিস্থিতি গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এ অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা, অবিশ্বাস বৃদ্ধি, বহুপক্ষীয় সহযোগিতায় প্রভাব ও উগ্রবাদের ক্ষেত্র বিস্তৃতিকরণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রভাব এ অঞ্চলে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে, মানবতার পক্ষে ও ন্যায়ের পক্ষে।কারও পক্ষেই এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সমীচীন হবে না, যাতে করে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়, শান্তি বিঘ্নিত হয়, মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়।

এইচ.এস/

ভারত-পাকিস্তান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন