সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বের সবচেয়ে দামি সবজি 'হপ শুটস'

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:৩৫ অপরাহ্ন, ২৮শে মার্চ ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

হপস নামক এক ধরনের থোকা থোকা ফুলবিশিষ্ট গাছের ডগা 'হপ শুটস' নামে পরিচিত, যার দাম শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠবে! হপ শুটস যেমন বিশ্বের সবচেয়ে দামি সবজি, তেমনই এর পুষ্টিগুণও অনেক।

বাজারে সবজি কিনতে গেলে কমবেশি দর কষাকষি করার প্রবণতা আমাদের সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু এমন একটি সবজি রয়েছে যা কিনতে গেলে দরাদরি করে হয়তো পেরে উঠবেন না। এক কেজি হপ শুটসের বাজারমূল্য প্রায় ১০০০ ইউরো এবং এটিই বিশ্বের সবচেয়ে দামি সবজি! 

হপ শুটসের দাম এত বেশি হওয়ার কারণ মূলত এটি উৎপাদন করতে কৃষকদের অত্যন্ত পরিশ্রম করতে হয়। এগুলো অভিন্ন সারিতে জন্মায় না এবং প্রতিটি ফসল তোলার সময় নিচু হয়ে ঝুঁকে ঝুঁকে তুলতে হয়। সেই সাথে ফুলগুলো এত ছোট যে এক ব্যাগ ভর্তি করতে শত শত ফুল তুলতে হয়। সাধারণত, এ গাছের ফুল (হপ কোনস) বিয়ারসহ নানা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

হপ- হিউমুলাস লুপুলাস গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম। যদিও খুব কম মানুষই এই নামটির সঙ্গে পরিচিত। এটি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটির বৈশিষ্ট্য জানার আগ পর্যন্ত উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের অধিবাসীদের কাছে এটি আগাছা হিসেবে পরিচিত ছিল হপ। হপ শুটসের ফুলকে বলা হয় ‘হপ কোনস’। এই ফুল বিয়ার প্রস্তুত করতে কাজে লাগে। আর বাকি অংশ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 বিশ্বের সবচেয়ে দামি সবজিরর গাছ এটি। এর ১ কেজির দাম ১ লাখ টাকার কাছাকাছি! বাজারে চাহিদা না থাকায় বাংলাদেশ-ভারতে এই সবজির চাষ হয় না। মূলত ইউরোপ এবং আমেরিকায় এর বহুল উৎপাদন হয়ে থাকে। সবজিটি দেখতে অনেকটা অ্যাসপারাগাসের মতো। খেতেও অনেকটা সে রকমই। অ্যাসপারাগাস যে ভাবে রান্না করে খেতে হয় এই সবজিটিও সে ভাবেই খেতে পারবেন। এ ছাড়া আরও অনেক ব্যবহার রয়েছে এর।

ব্যবহার

এই গাছের ফুল হপ নামে পরিচিত। এই ফুল দিয়ে বিয়ার তৈরি করা হয়। কোনও পানীয়তে সুগন্ধী দেওয়ার কাজেও লাগে এই ফুল। হপ ফুল দিয়ে তৈরি বিয়ার সহজে নষ্ট হয় না। মূলত পানীয় তৈরিতেই প্রথম এই গাছের ব্যবহার সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর ধীরে ধীরে এর ঔষধি গুণ সামনে আসতে শুরু করে।

ওই সবজিটি প্রথম চাষ হয় ৭৩৬ সালে জার্মানিতে। তবে প্রথম হপ শুটস পানীয়তে ব্যবহার করা হয় ১০৭৯ সালে। পরবর্তী কালে হল শুটস-এর আরও অনেক ঔষধি গুণের কথা সামনে আসে। এর বিশেষ অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল গুণ রয়েছে। টিবি রোগীদের ওষুধ তৈরিতে, ক্যানসারের চিকিৎসায় কাজে লাগে হপ শুটস। এই সমস্ত কারণেই হপ শুটস-এর এমন আকাশছোঁয়া দাম।

আরো পড়ুন: এবার ৩০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে ফরিদপুরে

হপ শুটস-এর মধ্যে থাকা অ্যাসিড ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলিকে নষ্ট করে দেয়। ক্যানসারের ওষুধ তৈরিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই হপ শুটস নিয়ে বহু গবেষণাও চলছে। এই গাছটি মূলত ঝোপ প্রকৃতির। ফুলগুলি সবুজ রঙের আর খুব নরম। তাই খুব সাবধানে গাছ থেকে তুলতে হয় সেগুলি। তোলার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আর বিক্রির যোগ্য থাকে না।

চাষাবাদ

হপস চাষাবাদের জন্য আদর্শ মাটি হলো এমন মাটি যার মধ্য দিয়ে হপের শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। তবে মাটি শুকনা হওয়া জরুরি। হপ শুটস এর শিকড় ৪ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত মাটির গভীরে যায়। বসন্ত ও গ্রীষ্মে গাছের বৃদ্ধির জন্য পানি সেচ দিতে হবে।

হপস শুটস এর বীজ মার্চের আগেই লাগাতে হয়। মার্চের শেষে বীজ অংকুরিত হয়ে গাছ ঝোপালো আকার ধারন করলে তখন ডালপালা ছাঁটাই করে দিতে হবে। তবে বীজ লাগানোর আগে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। হপ শুটস উৎপাদনের জন্য শীত প্রয়োজন হয়। হপ শুটস এর মুকুলগুলি ২৪ থেকে ২৫ ডিগ্রী বেশি তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে না।

তবে বাংলাদেশে শীতকালে সঠিক পরিবেশ তৈরি করে এই সবজি চাষ করা সম্ভব। এই সবজি রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

এসি/  আই. কে. জে/

সবজি হপ শুটস'

খবরটি শেয়ার করুন