মঙ্গলবার, ৭ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলার কৃষক বিদ্রোহের গান

সাহিত্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৩:০৩ অপরাহ্ন, ২২শে জানুয়ারী ২০২৫

#

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

রবিউল হক

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের শোষক শ্রেণী বরাবরই জুলুম চালিয়েছে কৃষকের ওপর। কখনো মালিকপক্ষ, কখনো জমিদার বা মজুতদারের বেশে। অধিকারবঞ্চিত এদেশের কৃষকসমাজ যাতে কোনোভাবেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, বর্বর আইন করে সেই প্রচেষ্টাই তারা অব্যাহত রেখেছিল। জুলুম করে, সম্পদ ও সম্ভ্রম কুক্ষিগত করে বঞ্চিত করেছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রায় দুইশ’ বছরের ইতিহাস হলো কৃষক নিপীড়ন, কৃষক আন্দোলন ও কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাস। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যত যুদ্ধ হয়েছে, তার মূলে কৃষকরাই গর্জে উঠেছে বারবার, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে। কৃষক আন্দোলনের মধ্যদিয়ে যেমন অধিকার আদায়ের রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি হয়েছে, তেমনি  সাংস্কৃতিক বিপ্লবও সাধিত হয়েছে। যার ফলে বাংলা ভাষায় নাটক,  পুথিঁ, প্রতিবাদী গান, স্বদেশী গানসহ নানান ক্ষেত্র সমৃদ্ধ হয়েছে। গানের মধ্যে নিপীড়িত কৃষকের ঘটনা, ইতিহাস ও ভাষা বৈচিত্র্যের সম্মিলন ঘটেছে পরিস্থিতির বশবর্তী হয়ে।

ব্রিটিশ-ইংরেজ নীলকর-বাহিনী বাংলার চাষীদের উপর যে অত্যাচার চালাতো, দীনবন্ধু মিত্র ‘নীল দপর্ণ’ (১৮৬০) নাটকে তারই প্রতিবাদ স্বরূপ শ্লেষাত্মক গানও লিখেছেন যা ব্রিটিশ উৎখাত আন্দোলনে ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। গানটি হলো-

আরো পড়ুন : ক্ষেতের পাখি তাড়াবার গান আমাদের লোকসংস্কৃতির অংশ

“নীল বাঁদরে সোনার বাংলা

করলো ছারখার

অসময়ে হরিশ ম’লো, লঙের

হলো কারাগার

চাষীর এবার প্রাণ বাঁচানো ভার।”

বাংলার প্রতিবাদী গানের অন্যতম পথিকৃৎ মুকুন্দ দাস (১৯৭৮-১৯৩৪) এবং কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)। তাঁরা  দুজন বাংলা গানে নিয়ে এসেছিলেন নতুন বিপ্লব ও গণচেতনার ভাষা। মুকুন্দ দাস লিখেছেন-

‘ভাই রে ধন্য দেশের চাষা

এদের চরণ ধূলি পড়লে মাথায়

প্রাণ হয়ে যায় খাসা।।

এরা কপটতার ধার ধারে না,

সত্য ছাড়া মিথ্যা কয় না,

প্রাণের কথা গুছিয়ে বলার

নেইকো এদের ভাষা’।।

এছাড়া, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা একটি গান রয়েছে যা চাষীদের জাতীয় সংগীত হিসেবে পরিচিত কৃষক সম্মেলনের গান-

‘ওঠ্ রে চাষী জগদ্বাসী ধর্ কষে লাঙল।

আমরা  মরতে আছি-ভালো ক’রেই মরব এবার চল্

মোদের  উঠান-ভরা শস্য ছিল হাস্য ভরা দেশ

ঐ  বৈশ্য দেশের দস্যু এসে লাঞ্ছনার নাই শেষ,

ও ভাই লক্ষ হাতে টানছে তারা লক্ষ্মী মায়ের কেশ

আজ মা’র কাঁদনে লোনা হ’ল সাত সাগরের জল’।।

শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সারি গানের ধাঁচে লেখা একটি গান তৎকালীন কৃষক আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগ্রামে উভয় বাংলাতে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল-

‘তোমার কাস্তেটারে দিও জোরে শান

কিষাণ ভাই রে,

কাস্তেটারে দিও জোরে শান।।

ফসল কাটার সময় হলে কাটবে সোনার ধান

দস্যু যদি লুটতে আসে কাটতে তাহার জান-রে’।।

কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাস এত ব্যাপক ও দীর্ঘ যে, কৃষকের গণসংগীতের পরিমণ্ডলে চল্লিশের শুরু থেকেই বেশকিছু গান সৃষ্টি ছাড়াও অনেক আগে থেকেই কৃষক বিদ্রোহ বিষয়ক গানের নমুনা পাওয়া যায়। এমনকি বাংলার লোকসংগীত পর্যালোচনা করলে কৃষকের বঞ্চিতের হাহাকার প্রতি পরতে পরতে উদ্ধৃত করা সম্ভব।

তথ্যসূত্র

১. সাইম রানা, বাংলাদেশের গণসংগীত: বিষয় ও সুর বৈচিত্র্য, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০৯

২. আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস (প্রথম খণ্ড), পড়ুয়া, ঢাকা, ২০০৩, পৃ. ২৫-৩০

৩. হেমাঙ্গ বিশ্বাস উজান গাঙ বাইয়া, মৈনাক বিশ্বাস সম্পা., অনুসৃষ্ট, কলকাতা, ১৯৯০

এস/ আই.কে.জে/ 











 

বিদ্রোহের গান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250