বুধবার, ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে মৎস্য খাত

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১০:৩২ পূর্বাহ্ন, ১৩ই জানুয়ারী ২০২৫

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

বাংলাদেশের বৃহত্তর সমাজের জন্য খাদ্য ও পুষ্টির জোগানের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে অ্যাকুয়াকালচার ও মৎস্য খাত।

দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ সরাসরি মৎস্য খাতে জড়িত। মৎস্য খাত জাতীয় জিডিপিতে ৩.৫০ শতাংশ, কৃষি জিডিপিতে ২৫.৭২ শতাংশ অবদান রাখছে এবং প্রাণিজ আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রদান করে থাকে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক গবেষণায় মৎস্যখাত নিয়ে এ বিষয়গুলোসহ বিস্তারিত উঠে এসেছে। গবেষণাটি সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত ‘সাসটেইনেবিলিটি’ জার্নালে প্রকাশ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক প্রধান ও ড. মো. আশরাফুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি গবেষক আতিকুর রহমান সানী গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করেন।

গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাছ উৎপাদনকারী দেশ, যার বিশাল পরিমাণ অভ্যন্তরীণ, উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক জলসম্পদ রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মৎস্য খাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে, যা দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং নির্ভরশীল সম্প্রদায়ের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখছে।

গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়, জলজ খাদ্য ব্যবস্থায় অসামান্য উৎপাদনের কারণে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান অর্জন করেছে। অভ্যন্তরীণ খোলা জলাশয়ে মৎস্য আহরণে তৃতীয় এবং মৎস্য চাষে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী, মোট ইলিশ উৎপাদনের ৬০ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে হয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের বিভিন্ন খাতের সঙ্গে মৎস্য ও জলজ চাষের ক্ষেত্রগুলো অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে (অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত) প্রাসঙ্গিক ও ব্যাপক অবদান রয়েছে।

আতিকুর রহমান সানী বলেন, ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার বেশ কয়েকটি লক্ষ্য অর্জনে মৎস্য ও জলজ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ সরাসরি মৎস্য খাতে জড়িত। মৎস্য খাত জাতীয় জিডিপিতে ৩.৫০ শতাংশ, কৃষি জিডিপিতে ২৫.৭২ শতাংশ অবদান রাখছে এবং প্রাণিজ আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রদান করে থাকে। জাতিসংঘের ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি-১৭) প্রতিটিতেই এ মৎস্য খাত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন অর্জনে অবদান রাখছে।

এই গবেষণাপত্রে এসডিজি অর্জনের জন্য কোভিড-১৯-এর প্রভাব এবং এই খাতের তাৎপর্যের ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের মৎস্য খাতের কর্মক্ষমতা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে। উন্নত চাষাবাদ কৌশল এবং সম্প্রসারণ পরিষেবার মাধ্যমে গত তিন দশকে দেশে মোট মাছের উৎপাদন ছয় গুণেরও বেশি বেড়েছে (৭.৫৪ থেকে ৪৩.৮৪ লাখ মেট্রিক টন)। অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলের অবদান ১৬ শতাংশ বেড়েছে। যদিও অভ্যন্তরীণ খোলা জলাশয়ের পরিমাণ ১০ শতাংশ কমেছে।

অধ্যাপক ড. শামসুল হক প্রধান বলেন, ‘অ্যাকুয়াকালচার এবং মৎস্য খাত বাংলাদেশের বৃহত্তর সমাজের জন্য খাদ্য ও পুষ্টির জোগানের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। যার সঙ্গে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার বেশ কয়েকটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য দৃঢ় সংযোগ রয়েছে। কিন্তু, এসডিজির সঙ্গে মৎস্য ও জলজ চাষ সেক্টরের সংযোগ সাধন করে খুব কম গবেষণা হয়েছে। তাই, গবেষণাটিতে এ শূন্যস্থান পূরণ করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। 

দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অব্যাহত এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জলজ সম্পদের দক্ষ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য জানিয়ে তিনি বলেন ‘সম্মানিত নীতিনির্ধারকদের এসডিজি পূরণের জন্য তাদের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া উচিত, যা মৎস্য খাতের সুনির্দিষ্ট এবং দ্রুত কার্যকারিতা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে পারে। আন্তঃবিভাগীয় বিনিয়োগ, গবেষণা অবকাঠামো, পরিবেশগত নীতি প্রণয়নের জন্য সমন্বয় এবং আধুনিক স্টোরেজ এবং বিপণন সুবিধার প্রবর্তন করা হলে দ্রুত অবস্থার উন্নতি হতে পারে বলেও জানান তিনি।

কেসি/ আই.কে.জে/  


মৎস্য খাত

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন