সোমবার, ২০শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** পাকিস্তান দেখাল কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ‘ডিল’ করতে হয় *** দেশে লাগাতার অগ্নিকাণ্ডে স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে সরকারের কোর কমিটি *** নাহিদের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বলল জামায়াত *** প্রথম আলোর আলোচনায় জুলাই সনদ *** আলোচনা-সমালোচনায় কবি-সাংবাদিক আলতাফ, সহকর্মীরা প্রতিবাদমুখর, সরব নারীনেত্রীরা *** জামায়াত সম্পর্কে কী এনসিপির নতুন উপলব্ধি *** খালেদা জিয়ার সংসদ নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে যা জানাল বিএনপি *** একের পর এক অগ্নিকাণ্ড নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জরুরি বৈঠক *** জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন কর্মসূচি *** আন্দোলনের জবাবে ট্রাম্প বললেন, ‘আমি রাজা নই’

মানুষের হাঁটাচলায় সাহায্য করবে ‘আয়রন ম্যান’ রোবোট!

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৩০ অপরাহ্ন, ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

একটা সময় কল্পনায় ভাবা হতো রোবোট মানুষের কাজ করে দিবে। সেই কল্পনা বাস্তবে পরিণত হয়েছে আরও অনেক দিন আগেই। শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টরে আজ রোবোট ও রোবোটের মতো স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে, সাথে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। এ যেন মানিকজোড়। 

রোবোট প্রযুক্তির বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় এবার দক্ষিণ কোরিয়ার একদল গবেষক তৈরি করেছেন শরীরে পরিধানযোগ্য (ওয়্যারেবল) একটি রোবোট, যেটি প্যারাপ্লেজিয়াতে আক্রান্ত (শরীরের নিচের অংশে অসাড়) ব্যক্তিদের হাঁটাচলায় দারুণভাবে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। সম্প্রতি এই রোবোটটির একটি প্রোটোটাইপ বা প্রাথমিক সংস্করণ প্রদর্শন করেছে গবেষক দলটি।

কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (কেআইএসটি) এর এক্সোস্কেলিটন ল্যাবেরটরি দলের গবেষকরা এই রোবোটটি তৈরি করেছেন। তাদের লক্ষ্য এমন একটি রোবোট তৈরি করা যেটি বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের দৈনন্দিন চলাফেরায় সহায়ক হয়ে উঠে। বলা চলে, তাদের প্রাত্যহিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে এই রোবোট।

উল্লেখ্য, প্যারাপ্লেজিয়ার মতো শারীরিক সমস্যা যাদের রয়েছে তারা এই রোবোটটি শরীরে পরিধান করে সাধারণ হাঁটাচলার পাশাপাশি সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করতে পারবে, এমনকি হাঁটার পথে কোনো বাধা এলে সেটি এড়িয়েও যেতে পারবে।   

আরো পড়ুন : সূর্যের সবচেয়ে কাছে যাওয়ার চেষ্টা নাসার মহাকাশযানের

গবেষক দলটির এক সদস্য কিম সিউং-হন নিজেও প্যারাপ্লেজিয়াতে আক্রান্ত। তাদের তৈরি রোবোটের প্রাথমিক সংস্করণটি (প্রোটোটাইপ) কিম নিজেই শরীরে পরিধান করে দেখিয়েছে। ওয়্যারেবল টেকনোলজি বা পরিধানযোগ্য প্রযুক্তিতে তৈরি এই রোবোটটির সাহায্যে কিম ঘন্টায় ৩.২ কিলোমিটার (২ মাইল) গতিতে হেঁটেছে, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেছে এবং পাশাপাশি (সাইডওয়েজ) মুভ করে একটি বেঞ্চে বসতে সক্ষম হয়েছে। 

এই রোবোটটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র ফিচার হচ্ছে, এটি ব্যবহারকারীর কাছে এসে নিজে থেকেই তার শরীরে এঁটে যেতে পারে। ফলে রোবোটটি পরিধান করার জন্যেও ব্যবহারকারীকে কোনোরুপ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।

রোবোটটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিম জানান, ‘আমি যেখানেই থাকি না কেন এটি (রোবোটটি) আমায় অনুসরণ করতে পারে, এমনকি যখন আমি হুইলচেয়ারে বসে থাকি তখনও। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচার হচ্ছে এটি নিজে থেকেই আমার কাছে এসে শরীরে এঁটে যায় এবং আমাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে।’  

গবেষকদের তৈরি অদ্ভুত এই রোবোটটি’তে ব্যবহৃত এক্সোস্কেলিটনের নাম হচ্ছে ‘ওয়াকঅন সুট এফ১’। এক্সোস্কেলিটন হচ্ছে শরীরে পরিধান করার একটি শক্তিশালী বাহ্যিক আবরণ যেটি শরীরের সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি পরিধানযোগ্য ডিভাইসের মাধ্যমে মানুষকে হাঁটাচলা করতে সহায়তা করে থাকে।

‘ওয়াকঅন সুট এফ১’ নামের এক্সোস্কেলিটনে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও টাইটানিয়াম, এবং এর ওজন ৫০ কেজি বা ১১০ পাউন্ড। এছাড়া এতে আরও ব্যবহার করা হয়েছে ১২টি ইলেকট্রনিক মোটর। হাঁটাচলার সময় মানুষের পায়ের জয়েন্টগুলো যেরকম নড়াচড়া করে এই মোটরগুলো সেটা নকল বা অনুকরণ করতে সক্ষম।

কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (কেআইএসটি) টিমের আরেক সদস্য পার্ক জেওং-সু বলেন তিনি এই রোবোটটি তৈরির অনুপ্রেরণা পেয়েছেন হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ‘আয়রন ম্যান’ থেকে। ‘আয়রন ম্যান দেখার পর আমার মনে হয়েছে আমি যদি বাস্তব জীবনে এমন একটি রোবোট তৈরি করে মানুষের সহায়তা করতে পারি তাহলে দারুন হবে।’

ব্যবহারকারীদের ব্যালেন্স রক্ষার জন্য রোবোটটির পায়ের পাতায় (সোলে) এবং উপরের অংশে বেশ কিছু সেন্সর রয়েছে যেগুলো প্রতি সেকেন্ডে ১০০০ সিগন্যাল মনিটর করার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে থাকে। ফলে তাদের পরবর্তী মুভমেন্ট পদক্ষেপ কী হতে পারে সেটাও বেশ অনুমান করতে সক্ষম এই রোবোট।

রোবোটটির সামনের অংশে যুক্ত লেন্সগুলো এর চোখ হিসেবে কাজ করে। এই লেন্সগুলো ব্যবহার করেই রোবোটটি এর চারপাশে যা আছে সেগুলো বিশ্লেষণ করতে পারে। সিঁড়ির উচ্চতা পরিমাপ করা ও সামনে কোনো বাধা থাকলে সেটা চিহ্নিত করার মতো কাজগুলো এই লেন্সের মাধ্যমেই করে থাকে রোবোটটি। পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্থ ব্যক্তিদের যেহেতু ইন্দ্রিয় (সেন্সরি) সক্ষমতার অভাব থাকে, তাই রোবোটটির লেন্সগুলো এক্ষেত্রে দারুন সহায়ক হতে পারে।

সাইবাথলন ২০২৪ প্রতিযোগিতায় এক্সোস্কেলিটন বিভাগে ‘ওয়াকঅন সুট এফ১’ শরীরে পরিধান করে স্বর্ণপদক জয় করেছেন কিম সিউং-হন। উল্লেখ্য, এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত ডেভেলপারদের তৈরি মানুষের সহায়ক বেশ কিছু রোবোট ৮টি ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে। 

স্বর্ণপদক জয়ী কিম আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে বলতে চেয়েছিলাম…যে আমিও এখন হাঁটতে পারি। আমি ওর সাথে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চেয়েছিলাম।’

সূত্র: রয়টার্স  

এস/  আই.কে.জে

‘আয়রন ম্যান’ রোবোট

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250