ছবি: সংগৃহীত
নেকেড অর্থাৎ নগ্ন হয়ে উৎসব পালন করা হয় জাপানে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও প্রতিবছর রীতি মেনে ঘটা করে পালিত হয় এই ‘নেকেড মেন’ ফেস্টিভ্যাল। তবে এই বছরই সমাপ্তি ঘটলো এই ফেস্টিভ্যালের। পরের বার থেকে আর অনুষ্ঠিত হবে না এই ‘নেকেড মেন’ ফেস্টিভ্যাল।
গত রোববারই (১৮ই ফেব্রুয়ারি) শেষবার জাপানে এই প্রাচীন উৎসব পালিত হয়। আয়োজন শেষে আয়োজকরা জানিয়ে দেন, পরের বছর থেকে আর হবে না এই নগ্ন উৎসব।
এই উৎসব পালন করা হয় জাপানের কোকুসেকি মন্দিরে। এই মন্দিরের উৎসবটি চন্দ্র নববর্ষের সপ্তম দিন থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হত। যুগ যুগ ধরে বছরের দ্বিতীয় মাসের তৃতীয় শনিবার ঘটা করে পালিত হয় এই উৎসব।
মন্দির কর্তৃপক্ষ এই বার্ষিক অনুষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা মনে করছে, এই উৎসব স্থানীয় বয়স্কদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উৎসবের আচারবিধি তাদের জন্য পালন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাপানের ‘নেকেড মেন’ ফেস্টিভ্যালের আরেক নাম সোমিনসাই উৎসব। কোকুসেকি মন্দিরে পালিত হয় এই উৎসব। এই অনুষ্ঠানে জাপানের শত শত পুরুষেরা ছোট সাদা কাপড় জড়িয়ে সামিল হন। সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষেরা বরফের পানিতে গোসল করে শুদ্ধ হন।
জানা যায়, প্রথামাফিক একটি কাপড়ের ঝোলা নিয়ে টানাটানি শুরু হয় নগ্ন ব্যক্তিদের মধ্যে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ওই ঝোলার মধ্যে থাকা কাঠের টুকরোগুলো আসলে সৌভাগ্যের প্রতীক। সেগুলোর নাগাল পেলেই সমস্ত অশুভ বিষয় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
তাই প্রতি বছরই এই উৎসবে মেতে ওঠে জাপানের স্থানীয়রা। উৎসব চলাকালে ‘জাসসো জোয়াসা’ ধ্বনিতে ভরে ওঠে লোয়াতের কোকুসেকি মন্দির প্রাঙ্গন। এই ধ্বনির অর্থ শয়তান দূরে হটাও। এই ধ্বনির মাধ্যমে প্রতি বছরই এই অনুষ্ঠান পালিত হয়। তবে এই অনুষ্ঠানের নেপথ্যে থাকে হাজারো রীতিনীতি। অনুষ্ঠান শুরুর আগে কটিবস্ত্র পরে স্নান সারেন পুরুষরা। প্রবল ঠান্ডার মধ্যেই সামান্য বস্ত্র পরেই অনুষ্ঠানে অংশ নেন তারা।
আরও পড়ুন: যে গ্রামের মানুষ খাবার খায় এক দেশে, ঘুমায় অন্য দেশে
এইবার জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন আয়োজকরা। সেই জন্যই এদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বহু মানুষ। সাম্প্রতিক অতীতে এত বেশি ভিড় শেষ কবে হয়েছিল বলে মনে করতে পারছেন না আয়োজকরা। কেবল অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নয়, দর্শক হিসাবেও হাজির ছিলেন অনেকেই। হাজার বছরের অনুষ্ঠানের সমাপ্তিটা ক্যামেরাবন্দি করে রাখেন তারা।
কেন হঠাৎ বন্ধ হচ্ছে হাজার বছরের পুরনো অনুষ্ঠানটি?
আয়োজকদের মতে, বয়সের কারণে এই অনুষ্ঠান আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সমস্ত নিয়ম মেনে আয়োজন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। বাস্তবটাকে তো অস্বীকার করা যায় না।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই জাপানে বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। আশঙ্কাজনকভাবে জন্মহার কমছে। এহেন পরিস্থিতিতে বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে সেদেশের সংস্কৃতিও।
জানা গেছে, জাপানের জনসংখ্যার হার কমতে শুরু করেছে। যুব সম্প্রদায়ের থেকে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপান এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে অগণিত স্কুল, দোকান এবং পরিষেবাগুলি বন্ধ করতে বাধ্য করেছে, বিশেষ করে ছোট বা গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে।
এসকে/