ছবি: সুখবর
আজ সোমবার (৩০শে সেপ্টেম্বর) জাতীয় কন্যা শিশু দিবস। ‘কন্যা শিশুর স্বপ্নে গড়ি আগামীর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ বছর দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবছর ২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ পালন করা হয়। শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৩০শে সেপ্টেম্বর পালিত হয় জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। এর বাইরে প্রতিটি দেশ নিজেদের সুবিধামতো জাতীয়ভাবে কন্যাশিশু দিবস পালন করে থাকে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জাতীয় কন্যাশিশু দিবসের তাৎপর্য ব্যাপক। কন্যা শিশুর সুরক্ষা, শিক্ষার অধিকার, পুষ্টি, ন্যায়প্রাপ্তির জন্য আইনি সহায়তা, চিকিৎসা সুবিধা, বৈষম্য রোধ, নির্যাতন থেকে রক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনসহ সব ধরনের বৈষম্য দূর করাই এর লক্ষ্য।
প্রায় পরিবারে কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্য দৃশ্যমান। প্রাইভেট পড়াতেও ছেলের অগ্রাধিকার। খাওয়ার সময় তার মা বড় বা ভালো মাছটি তুলে দেন ছেলের পাতে, পোশাক কিনতে গেলেও প্রায় একই অবস্থা। পাড়া-মহল্লায় বখাটেদের উপদ্রব উদ্বেগজনক, কন্যাশিশুকে নিয়ে মা-বাবার উৎকণ্ঠার শেষ নেই। এসএসসি পাস করতে না করতেই দরিদ্র মা-বাবা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যান। বাল্য বিবাহের কবলে পড়ে অনেকের জীবন শেষ হয়ে যায়।
প্রতিনিয়তই কন্যাশিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ধনী-গরীব কোথাও নিরাপদে নেই, সারা জীবন তারা নিরাপত্তাহীনতার ভেতর দিয়ে বড় হতে থাকে। অনেক সংসারে কন্যাসন্তান চায় না, সেখানে তারা কন্যা সন্তানকে অভিশাপ বা বোঝা মনে করে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারে কন্যাশিশু চরম অবহেলার শিকার। এ ক্ষেত্রে কেবল পুরুষ নয়, মানসিক নির্যাতনে মহিলাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ, এমনকি সামাজিক মর্যাদায় কন্যাশিশুরা অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। ২৮(১) নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বাসস্থান বা পেশাগত কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। ২৮(২) নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে। এ ছাড়াও কন্যাশিশু তথা নারীদের প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ রোধ, শিক্ষার ব্যবস্থা করাসহ নিরাপত্তায় নানা বিধি-বিধান আইনের প্রচলন আছে। কিন্তু সঠিক প্রয়োগ নেই। এ জন্য অধিকাংশ কন্যা শিশুরা সমান অধিকার ভোগ করতে পারে না।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সেটা কন্যা হোক কিংবা ছেলে হোক। প্রতিটি শিশুই সমান। সবারই সমান অধিকার আছে। রাষ্ট্র ও সমাজকে এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কন্যা শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
এসি/ আই.কে.জে/