প্রতীকী ছবি - সংগৃহীত
নব্য এই চাঁদাবাজ ও দখলদাররা রাতারাতি তাদের অবস্থান জানান দিতে বিভিন্ন পন্থা গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা অঙ্গসংগঠন কিংবা সহযোগী সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দলবল নিয়ে চাপ প্রয়োগ করে, হুমকি দিয়ে ঠিকাদারি কাজ দখল করেছে। অনেক জায়গায় পুরোনো ঠিকাদারদের কাজ বন্ধ করে দিয়ে টাকার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে।
সারা দেশে দখল ও চাঁদাবাজির ঘটনা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন শত শত অভিযোগ গণমাধ্যমে উঠে আসছে। থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে, কিন্তু পুলিশ নিরুপায়। আর এই কাজে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিচু পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও এক ধরনের সুবিধাবাদী গ্রুপ সুযোগ নিচ্ছে। পেশাদার অপরাধীরাও বাদ যাচ্ছে না। মার্কেট থেকে শুরু করে ফুটপাত, জমি থেকে শুরু করে দোকান কিছুই বাদ যাচ্ছে না। নির্মাণাধীন ভবনেও হানা দিচ্ছে চাঁদাবাজরা। ফলে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেন্দ্র থেকে বারবার নির্দেশনা দেওয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। কিছু ব্যবস্থা নেয়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা বিষয়গুলো সামনে আনতে ভয় পাচ্ছেন। এই দখলবাজি নিয়ে এরেই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু মানুষের প্রাণও গেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর আবার গণহারে যে মামলা হচ্ছে সেখানেও এক ধরনের বড় রকমের বাণিজ্য হচ্ছে। মামলার বাদী চিনে না আসামীদেরকে। আবার আসামীরা চিনে না বাদীকে। ভুয়া মামলা সাজিয়ে এক শ্রেণির অসাধু চক্র মামলা করছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে এগুলো স্বীকারও করা হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। সুবিধাবাদীদের একটি গ্রুপ এর মধ্যে বিএনপির সঙ্গে মিশে গেছে। চাঁদাবাজি আর দখলবাজিতে সুযোগ বুঝে তারাও নেমে পড়েছেন।
রাজধানীর মার্কেটগুলোতেও নিয়ন্ত্রণ বদলে গেছে। এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটের দখল নিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে কয়েক দফা পাল্টা পাল্টি হামলা হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের জেলা-উপজেলা শহরের সব মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ হাতবদল হয়েছে। বিএনপির দলীয় পরিচয় দিয়ে প্রতিটি মার্কেট কমিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন একদল দখলবাজ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে আছেন। তারা এই দখলকে কেন্দ্র করে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া, মতিঝিল, গাউছিয়া, ফার্মগেটসহ সব ফুটপাতে হকার বসিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন। এতে ওই মার্কেটগুলোর সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই চাঁদাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার দখলদাররা রাজনৈতিক দলের ব্যানার ব্যবহার করে দখলবাজি করছেন। একই চিত্র দেশের সর্বত্র বিরাজ করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেন্দ্রীয় পক্ষ থেকে বারবার নির্দেশনা দেয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে তার প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই গণমাধ্যমসহ স্যোশাল মিডিয়ায় একের পর এক ভয়ংকর খবর বেরিয়ে আসছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় তো রীতিমতো একটা আতংকের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘটনাগুলো সামনে আনতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ প্রশাসন থেকে কোনো প্রতিকার পাওয়ার আশা-ভরসা পাচ্ছেন না। জনগণকে এক প্রকার অনিরাপদ পরিবেশে আশংকার মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে।
আই.কে.জে/