শনিবার, ২৯শে জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৪ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক থাকতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

স্বাস্থ্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:২৬ অপরাহ্ন, ১লা জুন ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

কোভিড-পরবর্তী সময়ে দেশের প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু জ্বর। ২০২৩ সালে ভয়াবহ তাণ্ডব চালানো এডিস মশাবাহিত এই জ্বরের ধারবাহিকতা রয়েছে চলতি বছরেও। এর মধ্যে প্রাক-বর্ষা মশা জরিপে রাজধানীর ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ বসতবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যা গত প্রাক-বর্ষা মৌসুমে ছিল ৪ দশমিক শুন্য তিন শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় রাজধানীর বাসাবাড়িতে এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে সাড়ে তিন গুনেরও বেশি। এ অবস্থায় চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা বছরে তিনবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মশার বিষয়ে জরিপ করে থাকে। এগুলো হলো, প্রাক-বর্ষা, বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী জরিপ। গত ২৮শে মে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রাক-বর্ষা এডিস সার্ভে ২০২৪ এর ফলাফল প্রকাশ করে। জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় চলতি বছরের ১৭ই এপ্রিল থেকে ২৬শে এপ্রিল পর্যন্ত এডিস মশার ঘনত্ব ও প্রজনন স্থান নিরীক্ষার জন্য এ জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয়। এতে দুই সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্দিষ্ট সূচকের চেয়ে বেশি পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯৯টি ওয়ার্ডে ২১টি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। প্রতি ওয়ার্ড ৮টি ব্লকে ভাগ করে দুটি টিম ৪টি ব্লকে ১৫টি করে প্রতি ওয়ার্ডে ৩০টি বাড়িতে জরিপ পরিচালনা করেন। ১০ দিনে ৯৯টি ওয়ার্ডে সর্বমোট ৩ হাজার ১৫২টি বাড়িতে জরিপ করা হয়। তাছাড়া যেসব ওয়ার্ডে বাড়ির সংখ্যা বেশি ও এলাকা বড় সেগুলোতে ৩-৫টি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়।

ঢাকার যেসব ওয়ার্ড ডেঙ্গুর ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’

এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। স্বীকৃত এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের ওপরে হলে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করা হয়। আর হাউজ ইনডেক্স ১০ শতাংশের বেশি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্দিষ্ট সূচকের চেয়ে বেশি, যা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নাম্বার ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি মশার ঘনত্ব পাওয়া যায়। এই ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ছিল ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এই ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত এলাকাগুলো হলো- চামেলীবাগ, আমিনবাগ, রাজারবাগ, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন  জিপিও, বিজয়নগর, ট্রাফিক পুলিশ ব্যারাক ও শান্তিনগর এলাকা। দক্ষিণ সিটির বাকি ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ৪, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭ ও ২৩।

ডেঙ্গু নিয়ে কথা হয় শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। শুধু ঢাকার জরিপ করে সারাদেশের পরিস্থিতি বুঝা সম্ভব না। সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপের সুযোগ নাই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবোর্চ্চ ব্রুটো ইনডেক্স ৪৩ দশমিক ৩৩ ছিল ১২ নাম্বার ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত এলাকাগুলো হলো, আহম্মদনগর (আংশিক), শাহআলীবাগ, দক্ষিণ বিশিল, পাইকপাড়া, টোলারবাগ (উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ)। উত্তর সিটির ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ১২, ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭ ও ৩৩।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর যে ৪৬৩টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও পিউপা (লার্ভার পরের স্তর) পেয়েছে তার মধ্যে বহুতল ভবনে ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। স্বতন্ত্র বাড়িতে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ, নির্মাণাধীন বাড়িতে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং সেমিপাকা বাড়িতে ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ লার্ভা পাওয়া যায়। আর উত্তর সিটিতে গড় ব্রটো ইনডেক্স ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং হাউস ইনডেক্স ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া দক্ষিণ সিটিতে ব্রুটো ইনডেক্স ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং হাউস ইনডেক্স ১৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

আরো পড়ুন: আচরণবিধি লঙ্ঘন : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীকে ইসিতে তলব

এসি/ আই.কে.জে/


ডেঙ্গু জ্বর

খবরটি শেয়ার করুন