ছবি : সংগৃহীত
যুগে যুগে আন্দোলনের ভাষা হিসেবে গ্রাফিতি-স্লোগান-দেয়াল লিখন জায়গা করে নিয়েছে। গ্রাফিতি, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও দেয়াল লিখন একটি অপরটির পরিপূরক। শিল্পের ভাষায় বলা হয় গ্রাফিতি, আমাদের দেশে শব্দটি বহুল প্রচলিত না হলেও এটি বিভিন্ন নামে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে। এক সময় দেশে দেয়াল লিখন মানেই ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচারবন্দনা। কিন্তু বর্তমান সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশের দেয়ালগুলোকে একদম ভিন্নরূপে দেখা যাচ্ছে। ঢাকা পরিণত হয়েছে গ্রাফিতির নগরীতে। ঢাকার দেয়ালের একটি অংশও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে গ্রাফিতি নেই। এর আগে ঢাকার দেয়াল কখনো এমন রঙিন রূপ ধারণ করেনি। গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনে নান্দনিকতার চেয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষের মনের কথাই বেশি ফুটে উঠেছে। তরুণ শিক্ষার্থীদের হাতেই জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে। তরুণদের বিশেষ বার্তায় পরিণত হয়েছে গ্রাফিতির দেয়াল।
গ্রাফিতির প্রচলন নতুন নয়। প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে রোম ও পম্পেই নগরীর সমাধিস্থলের দেয়াল ও ধ্বংসাবশেষে গ্রাফিতির প্রমাণ মিলেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর অর্থপূর্ণ তাৎপর্যও বেড়েছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের অলিগলি, শহরের প্রধান প্রধান ফটক জুড়ে পোষ্টারসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিতি ছিল। নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে ঢাকার রাস্তায় প্রথম গ্রাফিতি লিখেন আইজুদ্দিন নামে একজন রিক্সাচালক। ‘কষ্টে আছে আইজুদ্দিন' ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে লেখা গণমানুষের কথা হয়ে উঠেছিল। তখন যে কোনো দাবি-দাওয়ার সাথে আইজুদ্দিনের নাম জুড়ে দিতো। বেকারদের চাকরি দাও- এমন দাবির সাথেও জুড়ে দিতো কষ্টে আছে আইজুদ্দিন। এভাবে যে কোনো দাবির সাথে মানুষের কষ্টের ভাষায় পরিণত হয়েছিলেন আইজুদ্দিন।
বর্তমান গণ-অভ্যুত্থানের পর দেয়াল লিখনগুলোর বক্তব্যে পরিবর্তনের অঙ্গীকারের কথাই বেশি ধরা পড়ছে। আছে স্বাধীনতার প্রতি অনুভূতি, স্বৈরতন্ত্রের প্রতি ঘৃণা। জনগণ, সংস্কার, পুনর্গঠন, অসাম্প্রদায়িকতা, বহুত্ববাদ, সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি, বাকস্বাধীনতা, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন এইগুলোই ছিল গ্রাফিতিগুলোর প্রধান বিষয়। গ্রাফিতিতে ‘জনগণ’ শব্দটিতেই বেশি জোর দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ জনগণই সকল শক্তির উৎস এটাই বোঝানো হয়েছে। ‘এই মুহুর্তে দরকার, জনগণের সরকার',‘জনতায় ভরসা',‘জনগণই বিকল্প’,‘ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার চেয়ে জনগণের ক্ষমতা বেশি শক্তিশালী’,‘জনতাই আইন' এই ধরনের বক্তব্যই বিভিন্ন দেয়ালে দেখা যাচ্ছে। দেয়ালে গ্রাফিতির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্ন অংকন করেছে।
যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত গ্রাফিতি শিল্পী ব্যাঙ্কসি বলেছিলেন,‘আপনার কাছে যদি লড়াইয়ের কোনো হাতিয়ারই না থাকে, তখন গ্রাফিতি হয়ে উঠতে পারে একমাত্র অস্ত্র।’ যুগে যুগে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে গ্রাফিতি নীরব অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশে আগস্ট অভ্যুত্থান পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে গণমানুষের জাগরণে তরুণদের অঙ্কিত গ্রাফিতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।