মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩১শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** শিঙাড়া-জিলাপির জন্য সিগারেটের মতো সতর্কবার্তা দেখাবে ভারত *** নিজেকে মোটা ভাবা এক ধরনের মানসিক রোগ! *** তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার *** নিবন্ধন যাচাইয়ে এনসিপিসহ ১৪৪ দলই ফেল, সুযোগ পাচ্ছে সবাই *** হংকংয়ে অপেরা মঞ্চে ট্রাম্পের যমজ, ইভাঙ্কার স্বপ্নে অপহৃত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট *** লিটনদের জন্য ঢাকার সঙ্গে মিল রেখে প্রস্তুতি নিল পাকিস্তান *** তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে আপিল করা হবে: বদিউল আলম মজুমদার *** সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক: সি চিন পিং *** বদলির আদেশ ছিঁড়ে সাময়িক বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ৮ কর্মকর্তা *** আগস্ট থেকে ১৫ টাকা কেজিতে চাল পাবে ৫৫ লাখ পরিবার

আমরা স্তব্ধ, নির্বাক

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:৫৯ অপরাহ্ন, ১৩ই জুলাই ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনার প্রায় দুইদিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ দেখতে পায়, বর্বরোচিত এক হত্যাকাণ্ডের বীভৎস দৃশ্য। এরপর মূলধারার গণমাধ্যমে ঘটনার শিরোনাম হয়।

গত ৯ই জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত মিলে যেভাবে ওই ব্যবসায়ীকে নৃশংস ও নারকীয় কায়দায় হত্যা করেছে, তাদের ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা স্তব্ধ, নির্বাক! ওই ব্যবসায়ীর নাম লাল চাঁদ সোহাগ। পুলিশ বলছে, এলাকার ভাঙারির ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে দুর্বৃত্তরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

হত্যাকাণ্ডের সময় সেখানে অসংখ্য মানুষ ছিলেন। এত মানুষের সামনে পাথর দিয়ে একের পর এক আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে একজনকে। তাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেননি। অনেকে এখন বিবেকহীন। না হলে কীভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ‘উপভোগ’ করলেন! কারো কোনো টুঁ শব্দ নেই।

পাষণ্ডরা সোহাগকে কুপিয়ে ও শরীর-মস্তক পাথরে থেঁতলে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা তার লাশের ওপর নৃত্য করতেও দ্বিধা করেনি। মানুষ এত বর্বর ও নিষ্ঠুর হয় কী করে! নির্বিকার ছিলেন হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যরাও। আমরা কেমন সমাজে বাস করছি, যেখানে অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেন না?

অতীব উদ্বেগের বিষয়, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির যুব সংগঠন যুবদলের স্থানীয় নেতাকর্মী জড়িত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্ররোচনায় অনেক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এই পুরান ঢাকায়ই বিরোধী দলের হরতাল কর্মসূচি বন্ধ করতে বিশ্বজিৎ দাস নামের এক দরজিকেও কুপিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তরা। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পরও যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলো তার প্রমাণ। 

গত শুক্রবার খুলনার দৌলতপুরে যুবদল থেকে বহিষ্কৃত নেতাকে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। নৃশংস ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। কিন্তু বহিষ্কার করেও তাদের নেতাকর্মীদের থামাতে পারছে না দলটি। বহিষ্কার করে যে দলীয় শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তা নিজেদের মধ্য বিরোধে হত্যাকাণ্ডেই প্রমাণিত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী একের পর এক সহিংস ও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ায় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, দলটি কি নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, নাকি কোনো বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নানা দুষ্কর্মের সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে বদনামের ভাগিদার করা হচ্ছে? মাঠপর্যায়ে শৃঙ্খলার অভাব, অপরাধের প্রতি নীরব প্রশ্রয় এবং দলীয় পরিচয়কে অপরাধের ঢাল হিসেবে ব্যবহারের যে চিত্র ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে, তা তো বিএনপির জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠছে।

আমরা মনে করি, শুধু বহিষ্কারই সমাধান নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে, ঠিক তেমনি সরকারকেও সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণকে সাহস নিয়ে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই কেবল এমন পরিস্থিতি রোধ করা সম্ভব হবে।

সোহাগ হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করাকেই সরকারের সাফল্য বলে দাবি করেছেন। সরকারের নানা অঙ্গীকার কেন অপরাধ কমাতে পারছে না? একের পর এক নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মমাফিক কার্যক্রমের বাইরে কিছু করছে না। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিয়োজিত আছেন।

অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও পক্ষপাতমূলক। লালমনিরহাটের পাটগ্রামে আসামি ছিনতাই করার দায়ে সরকার স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু চট্টগ্রামের পটিয়ায় যারা পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হলেন, সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এটা আইনের শাসনের পরিপন্থী।

অপরাধীদের দমন করতে হলে আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দায় এড়ানোর মনোবৃত্তি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীকে হত্যা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন