ছবি: সংগৃহীত
অতিসম্প্রতি লক্ষ্মীপুর সদরে একটি ফিলিং স্টেশনে বাসে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। ঢাকার ধামরাইয়ে আরেকটি সিএনজি স্টেশনে মাইক্রোবাসে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে চালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনাগুলো বিছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, এ ধরণের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে।
বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সারা দেশেই প্রাকৃতিক গ্যাস বা কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) খুবই জনপ্রিয়। অন্যান্য জ্বালানি তেলের চেয়ে অনেক কম দামে এই গ্যাস পাওয়া যায় বলে গাড়িতে সিএনজির চাহিদাও দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। এই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অননুমোদিত সিএনজি (গ্যাস) পাম্প। সেখানে যারা কাজ করেন তাদের অধিকাংশই অদক্ষ মেকানিক। এসব জায়গা থেকে সেবা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। জীবনের মূল্য দিয়ে তার খেসারত দিতে হচ্ছে।
যানবাহনের একেকটি গ্যাস সিলিন্ডার যেন একেকটি শক্তিশালী বোমা। অনেক সময় দেখা গেছে বিপজ্জনক এই সিলিন্ডার ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে এসেছে। যানবাহন, বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁর অনিরাপদ সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রতিনিয়ত প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। বিভিন্ন কারণে সিলিন্ডার এখন বিপজ্জনক বোমায় পরিণত হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার গাড়িতে ব্যবহার করার কারণে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মানহীন ও সময়মত পুনঃপরীক্ষা না করানোই এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
সারা দেশে সিলিন্ডার গ্যাস চালিত গাড়ীর অর্ধেকের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও দুর্ঘটনা না ঘটলে কেউ রিটেস্ট করাতে আসে না। আর ট্রাক ও পিকাপ গুলোর তো সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করাই সম্পূর্ণ অবৈধ। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সিলিন্ডার ৫ বছর অন্তর অন্তর পরীক্ষা করানোর কথা থাকলেও যানবাহন গুলো সেটা করে না। সেজন্য সারা দেশে সেরকম রিটেস্ট সেন্টার তৈরি হয়নি। রিটেস্ট সেন্টার আছে মাত্র ১৪টি। এক্ষেত্রে বিআরটিএ থেকে ফিটনেস নেবার সময় রিটেস্ট বা পুনঃপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।
সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ লাখ। তারমধ্যে ঢাকায় আছে চৌদ্দ লাখের মতো। যার বড় অংশই সিএনজি চালিত। এছাড়া সারা দেশের গাড়ী মালিকদের একটি বিরাট অংশই সিএনজি চালিত গাড়ী ব্যবহার করে। কিন্তু এসব গাড়ীর অধিকাংশই সিলিন্ডার রিটেস্টের নিয়ম মেনে চলাচল করে না।
দীর্ঘদিনের পুরাতন সিলিন্ডার ব্যবহার করায় গাড়িচালক ও যাত্রী কেউই জানেন না তার গাড়ীটি কতটা বিপজ্জনক বোমা হয়ে উঠেছে। অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ এক একটি সিলিন্ডার বোমার চেয়েও ভয়ংকর।
আরও পড়ুন: তিন দেশের রাষ্ট্রদূতের নিয়োগ বাতিল
রাজধানী ঢাকাসহ জেলা-থানা শহরাঞ্চলে বাসাবাড়ি, হোটেল-রোস্তরাঁসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে গ্যাসসংযোগ না থাকায় রান্নার কাজে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করছে। এমনকি গ্রামাঞ্চলেরও অনেক পরিবার এখন মাটির চুলার পরিবর্তে গ্যাসের চুলায় রান্না করছে,জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে সিলিন্ডারের গ্যাস। এটা দেশের অগ্রগতির জন্য শুভলক্ষণ হলেও কিন্তু ঝুঁকি এড়াতে ব্যবহারকারীদের কোনো সচেতনতা নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৯১ সালে গ্যাস বিধিমালায়, গ্যাস সিলিন্ডারকে বিস্ফোরণ বলা হয়েছে। অর্থাৎ একেকটি গ্যাস সিলিন্ডার বড় মাপের একেকটি বিধ্বংসী বোমা। কিন্তু এটি ব্যবহারের বিধিমালা কেউ মানছে না। নির্দিষ্ট সময় পর পর সিলিন্ডারের ফিটনেস পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও সেটা কেউই করছে না। বিধিমালা প্রয়োগে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে হবে। কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করলেই এসব দুর্ঘটনা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।
এসি/ আই.কে.জে/