সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অদম্য সাহসের প্রতিচ্ছবি ইরানের নারীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৫৭ অপরাহ্ন, ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

ছবি : সংগৃহীত

২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, তরুণ কুর্দি ইরানি মহিলা, মাহসা আমিনি অপর্যাপ্ত পর্দার অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সারা ইরান বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ বিদ্রোহ সারাবিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। 

এ বিদ্রোহ দমনে ইরানের শাসক এগিয়ে আসলেও আন্দোলনরত নারীদের "নারী, জীবন ও স্বাধীনতা" শ্লোগান শাসকদের পিছু হটতে বাধ্য করে। নারীর সাথে জীবন ও স্বাধীনতার অভ্যন্তরীণ সম্পর্ককে গ্রহণ করে সারাবিশ্বের নরনারীরা। 

এ ঘটনা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দ্বারা কি ধামাচাপা পড়ে গেছে এরূপ প্রশ্নের উত্তর হলো, ‘না’। নারীরা এ আন্দোলনে জয়লাভ করেছে, এর প্রমাণ পাওয়া যায় মহিলারা এখন ইরানের সর্বত্র বোরকা ছাড়াই ঘুরতে পারছে। তারা তাদের পুরুষ বন্ধু ও পরিবারদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খেতে পারছে।

যদিও পোশাককে কেন্দ্র করে নারীদেরকে কোণঠাসা করার এক সুপ্ত ইচ্ছা রয়ে গেছে শাসকদের, তবে সত্যি বলতে গেলে ইরানের সমাজ ব্যবস্থার এখন পরিবর্তন হচ্ছে।

আমিনীর মৃত্যু নারীদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এক লড়াইয়ের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আয়তুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ১৯৭৯ সালে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি প্রদান করে ইরানের নারীদেরকে ইসলামি বিপ্লবে আকৃষ্ট করেন। তিনি নারীদেরকে প্রতিজ্ঞা করেন যে সমাজে নারীরা নিজেদের ভাগ্য ও কর্মসংস্থান নিজেরাই বেছে নিতে পারবে। কিন্তু পরবর্তীতে তার এ প্রতিশ্রুতি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ইরানে ফিরে আসার পরপরই তিনি নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক পর্দাপ্রথার ঘোষণা দেন।

১৯৭৯ সালের ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তার এ ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে হাজার হাজার নারী রাজপথে নেমে আসেন এবং শাসকচক্রের হাতে হামলার শিকার হন।

ইরানি নারীরা এরপর থেকেই সরকারকে চাপ প্রয়োগের একটি সুযোগও বৃথা যেতে দেয়নি। কিন্তু আইনি মামলায় তারা হেরে যায়। ফলস্বরূপ ১৯৭৮ সালে লিঙ্গ সমতার দিক দিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম জায়গা করে নেয় ইরান।

তবে ১৯৭৯ সালের পর থেকে বেশ কয়েকটি সফল আন্দোলন চালিয়েছে ইরানের নারীরা। সবচেয়ে সফল আন্দোলনগুলোর মাঝে একটি ছিল ২০০৬ সালে। যখন তারা পারিবারিক আইন সংস্কারের জন্য দশ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহের প্রচারাভিযান চালায়। তারা নারী-পুরুষ সকলের সাথেই কথা বলে তাদের এ প্রচারাভিযান চালায়। তাদের এ প্রচারাভিযানের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল নারীদের জন্য শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ করে দেওয়া। তাদের সংগৃহীত স্বাক্ষরের মধ্যে ৩০ শতাংশ স্বাক্ষরই ছিল পুরুষদের।

১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ খাতামির শাসনামলে তিনি নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করার আইনটি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। তবে তা করতে তিনি ব্যর্থ হন এবং মাহমুদ আহমাদিনেজাদের শাসনামলে এ আইন পরিবর্তনের আশা একেবারেই শেষ হয়ে যায়।

২০০৯ সালে জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আরব বসন্তের দুই বছর আগে সবুজ আন্দোলনের জন্ম হয়। 

সেই সময় থেকেই প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পকলা ও রাজনীতিতে নারী নেতৃবৃন্দের ভূমিকা দেখা যায়।

মধ্যযুগীয় সরকারি নিয়মের বিরুদ্ধে ইরানের নারীরা লড়াই করেছে এবং অনেকাংশে জয় লাভও করেছে। তারা সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।

নারী ও পুরুষ একত্রিত হয়ে গণতান্ত্রিক শাসনের মূল বিষয়গুলো জনগণকে শিখিয়েছে এবং গণতন্ত্রের জন্য সুশীল সমাজকে প্রস্তুত করেছে।

এসকে/ এএম/  

ইরান নারী ইরানি মহিলা আয়তুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি

খবরটি শেয়ার করুন