সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক লেনদেনে রূপি ব্যবহারের সম্ভাবনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৩:৩৩ অপরাহ্ন, ১০ই আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারত। আর সেকারণেই ভারতের ব্যবসায়িক অংশীদাররা ডলারের ঘাটতির সম্মুখীন হলে ভারতীয় মুদ্রা রুপিকে বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এটা স্পষ্ট করে যে, আন্তর্জাতিক লেনদেনে তারা ডলারের সাথে রূপিকে বিনিময় করতে চায় না। 

উন্নয়নে দ্রুত অগ্রগতির জন্য ভারত পুরো বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ভারত ২০২৩ ও ২০২৪ অর্থ বছরে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হবে। 

শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে নয়াদিল্লী সফরকালে তার ভাষণে বলেছেন, ৭৫ বছর আগে পূর্ব এশিয়ার জাপান, কোরিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলো যে অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছিল বর্তমানে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত সে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। 

বর্তমানে সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে যেটি নিয়ে সেটি হলো উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভারত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তার মুদ্রা ব্যবহারের অনুমতি দিবে কিনা। গত এপ্রিলে, ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে যে, ডলারের ঘাটতির সম্মুখীন দেশগুলির জন্য বাণিজ্যের বিকল্প হিসাবে ভারত তার মুদ্রা ব্যবহার করতে বলবে।

যেহেতু ভারতের অর্থনীতি এবং বাজারের আকার দিনদিন বড় হচ্ছে তাই দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ রূপিতে বাণিজ্যিক ও দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক লেনদেন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভারতীয় নীতি নির্ধারকরাও এখন ভাবছেন যে, ভারতীয় মুদ্রার এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের সময় এসেছে। তবে বর্তমানে ভারত তার বাণিজ্য অংশীদারদের সাথে আন্তর্জাতিক বিনিময়ে ডলার ব্যবহার চালিয়ে যাবে।

এ বছর মার্চের শুরুতে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ১৮টি দেশকে রূপিতে মূল্য পরিশোধের জন্য বিশেষ ভোস্ট্রো রুপি  অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পরে, অনেক দেশই রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেন প্রক্রিয়ায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। 

ইতোমধ্যেই, ভারতের সাথে  রূপিতে বাণিজ্যিক লেনদেনের ব্যাপারে নেপাল এবং ভুটানের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি তার আবুধাবি সফরে, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে রুপি-দিরহাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। যাইহোক এই চুক্তিগুলো দ্বিপাক্ষিক। এখনো এ বিষয়ে বহুপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। 

তবে এটি স্পষ্ট যে, ভারত আন্তর্জাতিক বিনিময়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ডলারে বাধা দিতে চায় না। বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৫০ শতাংশ বৈশ্বিক লেনদেন ডলারে হয়। 

চীনের অদলবদল চুক্তির বিপরীতে ভারতের পদক্ষেপগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারকে বাদ দেয়া নয়। বরং প্রতিবেশী দেশগুলিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সুবিধা প্রদান করা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভবিষ্যতে মার্কিন ডলার সংকটের সম্মুখীন হলে যাতে তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পথ সুগম হয়  সেজন্য একটি নতুন ভবিষ্যত মুদ্রার ব্যাপারে ভারত ভাবছে এবং এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা করছে। সাম্প্রতিক এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন আশা করা হচ্ছে যে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের বিষয় এবং ব্রিকসের সাধারণ মুদ্রা এ দুটি বিষয় নিয়ে আসন্ন ব্রিকস সম্মেলনে আলোচনা করা হবে।  

ভারত এবং ব্রিকসের নেতারা এটা স্পষ্ট করেছেন যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারকে বাদ দেয়া তাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং স্থানীয় মুদ্রায় যাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করা যায় সে ব্যাপারেই ঐক্যমতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা। 

ভারতের দীর্ঘ পরীক্ষার রুপি-রুবেল বাণিজ্য ব্যবস্থা স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের বিধিনিষেধের কারণে মুদ্রা বাজারে অন্যান্য মুদ্রার সাথে রুবেলের বিনিময় করা কঠিন হয়ে উঠেছে। যেহেতু রূপির সাথে রুবলের সম্পূর্ণ রূপান্তর সম্ভব নয় তাই এখানে দুই বার রূপান্তর হচ্ছে। রূপি থেকে ডলার এবং ডলার থেকে রূপি যাতে মোট বিনিময়ের ২.৩ শতাংশ খরচ হচ্ছে। 

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে ভারত যখন সস্তায় প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছিল তখন তাদের পুরাতন রুপি-রুবল বিনিময় প্রক্রিয়া সহায়ক ছিল না। তাই দুটি দেশই নতুন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। 

সরকারী তথ্য অনুসারে, রাশিয়া থেকে ভারতে পণ্যদ্রব্য আমদানি ২০২২-২৩ সালে ৩৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৪৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায় যা ২০২১-২২ সালে ছিল ৯.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

অতীতে ভারতীয় রুপি বেশ স্থিতিশীল ছিল। ২০২৩ সালে ডলারের বিপরীতে রূপির বিনিয়ম মূল্য পূর্বের তুলনায় ০.৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। 

ইতিমধ্যে ভারত এবং সিঙ্গাপুর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুরের পে নাও এর সাথে ভারতের ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে উভয় দেশের ব্যবহারকারীরা নিজেদের মধ্যে তাৎক্ষণিক তহবিল স্থানান্তর করতে সক্ষম হবে। এছাড়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেপাল ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেসে যুক্ত হয়েছে। একারণে এখন থেকে নেপালে ভারতীয় ই-ওয়ালেট ব্যবহার করা যাচ্ছে। উল্লেখ্য ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেসে যুক্ত হওয়া প্রথম দেশ হয়েছে নেপাল। 

এম.এস.এইচ/

ভারত

খবরটি শেয়ার করুন