শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ১৯শে আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিশীলতা দেশটিতে শান্তি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। মধ্যপ্রাচ্যে জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী ভঙ্গুর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের অর্থনীতি এবং শাসনব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি যখন এই প্রতিবন্ধকতাগুলো মোকাবেলা করছে, তখন এর সান্ত্বনামূলক উন্নয়ন এবং জরুরী ক্ষেত্র উভয়ের উপর আলোকপাত করা প্রয়োজন।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের মতে, তালেবান সরকারের সময় আফগানিস্তানের অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দেশটির ব্যাংকিং ব্যবস্থানায় পঙ্গুত্ব এবং পশ্চিমাদের উন্নয়ন সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও তালেবান সরকার আফগান মুদ্রার স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি রোধ, আমদানি পুনরুজ্জীবিতকরণ, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং শুল্ক ও কর সংগ্রহ বৃদ্ধিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে। অতীতে ওসামা বিন লাদেনের সময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আফগানিস্তান থেকে এটি একটি উল্লেখযোগ্য উত্থান। 

তবে যদিও এই অর্জনগুলি লক্ষণীয়, তবু তালেবান সরকার বৃহত্তর মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কেবলমাত্র সামান্য সংখ্যক মানুষকে ত্রাণ প্রদান করতে পারে। এই ভঙ্গুর ভারসাম্যকে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম বার্ড দুর্ভিক্ষের ভারসাম্য হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তাই আফগানিস্তানের জনসংখ্যার দুর্ভোগ কমানোর জন্য স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। 

আফগানিস্তানের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে দেশটির সম্পর্কের উপর নির্ভর করছে। তালেবান সরকারের শাসনামলে দেশটিতে সহিংস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হ্রাস  পেয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

এই পটভূমিতে, আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের বিষয়টি দেশটির  বৈশ্বিক সমর্থনের সাথে জড়িত। আফগানিস্তানের মোট জিডিপি ১৪.৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এর মাথাপিছু জিডিপি ৩৬৩.৭ মার্কিন ডলার। এ থেকে এটি স্পষ্ট যে দেশটি একটি নিম্ন আয়ের দেশ। আফগানিস্তানের রপ্তানি প্রধানত কৃষি, খনিজ এবং বস্ত্রপণ্য কেন্দ্রিক। 

যাইহোক, আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সাহায্যের পুনরুজ্জীবনের সাথে জড়িত। তালেবানদের উত্থানের আগে দেশটি বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল ছিল। সেসময় দেশটির মোট জিডিপির ৪০ শতাংশই ছিল বৈদেশিক সাহায্য। তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়ে, ব্যাপক সংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারায়, দেশটির সামাজিক পরিষেবাগুলি ভেঙে পড়ে এবং ব্যাপক দরিদ্রতা সৃষ্টি হয় দেশটিতে। এসব কিছু্ আফগান অর্থনীতির ভঙ্গুরতার দৃষ্টান্ত।

আগামীতে দেশটির নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে বের করাই এখন দেশটির জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করতে হবে। দেশটিতে সন্ত্রাসবাদ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও তালেবান সরকার দেশটির বেসরকারি খাতসমূহকে শক্তিশারী করার জন্য আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ নিচ্ছে তবুও আন্তর্জাতিক সাহায্য ছাড়া সেগুলোর দ্বারা দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।

আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি হল একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য, যা সম্ভাব্য সমৃদ্ধি এবং ভঙ্গুরতা উভয়টি দ্বারা চিহ্নিত। ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) ২০২৩ সালে দেশটিতে ১.৩ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য আফগানিস্তানের ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে যদি আফগানিস্তানের নীতিগুলি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্য করতে ব্যর্থ হয় তবে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। 

আফগানিস্তানকে সামনে এগিয়ে যেতে হলে এখন মধ্যম কোনো পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যদি দেশটিতে আন্তর্জাতিক সাহায্য ৩০ শতাংশ হ্রাস পায় তবে দেশটির জিডিপিতে ০.৪ শতাংশ সংকোচন ঘটতে পারে, যা দেশটিকে আরও দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত করতে পারে। যেহেতু আফগানিস্তানের ভাগ্য ভারসাম্যের মধ্যে ঝুলে আছে, সেহেতু আফগান জনগণের জন্য স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং একটি আশাপূর্ণ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার সমন্বয় অপরিহার্য।

পরিশেষে এটাই বলা যায় আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হল একটি সূক্ষ্ম যাত্রা যার জন্য জাতীয় শাসন, আন্তর্জাতিক সমর্থন, এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির উদ্যোগের একটি মেলবন্ধন প্রয়োজন। আফগানিস্তানকে দারিদ্র্য থেকে দূরে সরিয়ে সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার পথে আনার মূল চাবিকাঠি হলো অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা। 

এম.এস.এইচ/

আফগানিস্তান

খবরটি শেয়ার করুন