ছবিঃ সংগৃহীত
নতুন করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যদেশগুলো বরাবরের মতোই ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। ইউরোপীয় নেতারা ঘটা করে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন।
এরই মধ্য বিতর্ক শুরু হয়েছে, গাজার সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার পর ইইউ আগামী দিনে তাদের উন্নয়ন সহযোগিতা চালিয়ে যাবে, না বন্ধ করবে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর আর্থিক সাহায্য বন্ধ করা উচিত কি না, তা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়েছে জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্য। গত বছরের ১৬ মে ইইউ জোট ফিলিস্তিনিদের জন্য ২৫ মিলিয়ন ইউরো মানবিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সিদ্ধান্তের বিষয়টি ছিল মানবিক।
গত বছর ইইউ জোট এই মানবিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছিল, অধিকৃত অঞ্চল এবং গাজায় ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও পুরুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকায় অভাবী ফিলিস্তিনিদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ২৫ মিলিয়ন ইউরো মানবিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়।
সেই সময় ইইউ কমিশনার ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট জেনেজ লেনারসিচ বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে ইইউর সংহতি অটুট থাকবে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্য এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের কারণে ওই সাহায্য জরুরি হয়ে উঠেছিল। এ ছাড়া তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি দায়বদ্ধ।’
এই মুহূর্তে ইইউ জোট ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় দাতা। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর আর্থিক সাহায্য বন্ধ করা উচিত কি না, তা নিয়ে বিরোধের শুরুতে জার্মানিসহ আরও কয়েকটি দেশ সাহায্য বন্ধ করার পক্ষে কথা বলে। জার্মানি ইতিমধ্যে ইইউ জোটের বাইরে তাদের নিজস্ব উন্নয়ন সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রণালয় সোমবার(৯অক্টোবর) ঘোষণা করেছে, ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার জন্য আর্থিক সহায়তা ‘অস্থায়ীভাবে’ স্থগিত করবে। মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আগামী দিনের পরিস্থিতির সঙ্গে পর্যালোচনা করা হবে।
ইইউ কাউন্সিলের সভাপতি চার্লস মিশেল ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার জন্য সাময়িকভাবে আর্থিক সহায়তা স্থগিত করায় জার্মানির সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। বেলজিয়াম ও ফ্রান্স সতর্ক করে বলেছে, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সহায়তা এবং মানবিক সহায়তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনি জনগণকে হামাসের পক্ষে ঠেলে দেওয়া হবে, যা উত্তেজনা ও ঘৃণা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে সোমবার ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা দিলেও পরের দিন মঙ্গলবার তাদের ঘোষণা থেকে পিছিয়ে এসেছে। ইইউ কমিশন মঙ্গলবার বলেছে, এখনই ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা বন্ধ করা উচিত নয়। ইইউ বিদেশবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলও কূটনৈতিক উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন।
জার্মানির ‘টাজ’ পত্রিকাটি জানিয়েছে, ওমানের মাসকাটে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সঙ্গে এক বৈঠকে মঙ্গলবার জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘আমাদের একটি সত্যিকারের শান্তি উদ্যোগ দরকার।’
ইসরায়েলে হামাসের হামলা সম্পর্কে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য জেগে ওঠার আহ্বান জানান’ জোসেপ বোরেল। তিনি এর আগে মাসকাটে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন এবং ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান রিজাদ আল-মালিকিকে সংকট বৈঠকে বসতে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
জোসেপ বোরেলের ঘনিষ্ঠরা বলেছেন যে দুজনই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। জোসেপ বোরেলের সূত্র থেকে জানা গেছে, হামাসের হামলা সম্পর্কে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি তিনি রিজাদ আল-মালিকির কাছে জানতে চাইবেন।
হামাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাবদ্ধ।
একে/