সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:৫৫ অপরাহ্ন, ১৯শে মে ২০২৩

#

ছবি: সুখবর ডট কম

দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর এবং তাইওয়ানের চারপাশে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক ও ইউরোপ জুড়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত সপ্তাহে স্টকহোমে একটি বৈঠকে মিলিত হন। তবে এ বৈঠকে চীনকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। এ থেকেই বুঝা যায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে তখন তারা চীনকে মোটামুটি এড়িয়েই চলছে।

আগামী ২১ মে, জাপানের নাগাসাকিতে অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও চীনকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। বর্তমানে চীন সারাবিশ্বের জন্যেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর এবং তাইওয়ানের চারপাশে চীনের আগ্রাসী ভূমিকার জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের কাছ থেকে বেশ সমালোচনার শিকারই হয়েছে চীন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর বিশ্ববাসী উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। অনেকের ধারণা চীনও হয়তো তাইওয়ানের উপর আগ্রাসী আক্রমণ চালাতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ইঙ্গিতও প্রদান করছে চীন। গত ৫ এপ্রিল তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি সাই ইং এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সাথে দেখা করার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ, ৮ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত তাইওয়ানের আশেপাশে সামরিক মহড়া চালায় চীন।

গত নয় মাসের মধ্যে, এটি তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনের দ্বিতীয় সামরিক মহড়া। পূর্বে ২০২২ সালের আগস্টে, মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ চার দিনের সামরিক মহড়া চালায় চীন।

 স্টকহোমে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউরোপ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৬০ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন। তারা চীনের এই সামরিক তৎপরতা নিয়ে আলোচনা করেন।

উল্লেখযোগ্যভাবে, বৈঠকে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসা জানান, রাশিয়া এবং চীন তাদের সামরিক সহযোগিতা জোরদার করছে। রাশিয়া ও চীন এ লক্ষ্যে যৌথ বোমারু বিমান চালিয়ে পর্যবেক্ষণ করে এবং জাপানের আশেপাশে যৌথ নৌ মহড়া চালায়। এছাড়াও চীন রাশিয়ার কাছে এমন কিছু অস্ত্র বিক্রি করেছে যা রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে, ফলে যুদ্ধের ভয়াবহতা আরো বৃদ্ধি পাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন সাতটি চীনা কোম্পানিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে যারা রাশিয়ার কাছে অস্ত্র সরবরাহ করছে। এসব চীনা কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

গত ১৫ মাস ধরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। সারাবিশ্ব আজ সামান্য খাদ্যসামগ্রীর অভাবে ভুগছে। প্রতিটি দেশেরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

ইইউ পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি জোসেফ বোরেল বলেন, ইউক্রেনে যা ঘটছে তা প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্যেই সতর্কবার্তা। চীন যদি তাইওয়ান আক্রমণ করে তবে এর ফলাফল ভোগ করতে হবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিটি রাষ্ট্রকে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রাক্তন মার্কিন প্রধান, ডেভিডসন ২০২১ সালে বলেছিলেন, চীন ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান আক্রমণ করতে পারে। ২০২২ সালে সিআইএ এর উপ পরিচালক, ডেভিড কোহেন তার এ মন্তব্যকে সমর্থন প্রদান করে বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চাচ্ছেন দেশের সামরিক শক্তির সক্ষমতা। আর তাই ২০২৭ সালের মধ্যে তাদেরকে তাইওয়ানকে নিজেদের দখলে আনতেই হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ধরনের পরিস্থিতিকে বেশ সতর্কতার সহিতই দেখছে।

আরো পড়ুন: চীনের জাতীয় নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে নতুন আইন জারি

পূর্ব চীন সাগর, দক্ষিণ চীন সাগর এবং ফিলিপাইন সাগরের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত, তাইওয়ান প্রণালী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি ব্যস্ততম পথ, যেখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০% ই সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে সারাবিশ্বের সেমিকন্ডাক্টর চিপের ৯০% ই তৈরি হয় তাইওয়ানে।

এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হলো, তাইওয়ানকে যদি চীন জোরপূর্বক দখল করে নেয় তাহলে তা প্রযুক্তিশিল্পে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এর ফলে উন্নত দেশগুলো এমন পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হবে যে তাদের এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। অন্যদিকে চীন যদি তাইওয়ানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়, তবে দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্যান্য দেশেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে।

এমএইচডি/আইকেজে 

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চীন তাইওয়ান ইইউ প্রযুক্তিশিল্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ জাপান দক্ষিণ কোরিয়া

খবরটি শেয়ার করুন