দীর্ঘদিন ধরে চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমেছে। ফলে তারা ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছেন, এমনকি প্রতি মাসের মুদির বাজারের জন্য নির্ধারিত বাজেট কমিয়েছেন। শুধু তাই নয় অনেকেই তাদের দীর্ঘদিনের সঞ্চয় ভাঙাতে বাধ্য হয়েছেন।
অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের সাধারণ মানুষকে আর কত দুর্ভোগ পোহাতে হবে? মানুষের দুর্ভোগ কমাতে গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম-এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে গরিব মানুষ।
জানা যায়, পর্যাপ্ত সরবরাহ সত্ত্বেও রাজধানীতে দেশি পেঁয়াজ ১৩০/১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতের আগাম সবজি বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। এ ছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, ডাল ও আলুর দাম বেড়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, মোটা ও মাঝারি দুই ধরনের চালের দাম গত এক সপ্তাহে ২ শতাংশ বেড়েছে। তাতে প্রতি কেজি মোটা চাল এখন সর্বোচ্চ ৫২ টাকা ও মাঝারি মানের চাল ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাড়তি দামের কারণে গরিব মানুষ অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনেই বাড়ি ফিরছেন। স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ পুষ্টিকর খাবার কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
সবজির দাম চড়া হওয়ায় আগে অনেকে শাক কিনতেন। কিছুটা কম দামে যেসব শাক পাওয়া যেত, সেগুলোর দামও বেড়েছে আঁটিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা। এমনকি ফাটা-আধপচা সবজির দামও বেড়েছে কয়েকগুণ।
এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি রোধে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বল্পআয়ের ও দরিদ্র মানুষের সুরক্ষার জন্য সামাজিক নিরাপত্তার পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন। উদ্বেগের বিষয় হলো, ভরা মৌসুমেও চালসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে। মূলত অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই এমনটি ঘটছে।
দুঃখজনক হলো, অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুললেও বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে।
আরো পড়ুন: ভারত থেকে আসতে শুরু করেছে আলু, কমছে দাম
এ কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। সিন্ডিকেট করার অপরাধে শাস্তির বিধান থাকলেও এর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়। বাজার কারসাজি ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
তবে কেবল জরিমানা করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করার জন্য আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভোগ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যে আমদানিনির্ভরতা কাটাতেও নিতে হবে পদক্ষেপ।
এসি/ আই. কে. জে/