ফাইল ছবি
তুরস্কের জনগণের শাসনভার কার হাতে যাচ্ছে তা জানতে সবার চোখ রোববারের (২৮ মে) দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের দিকে। সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এগিয়ে থাকা এরদোয়ানকে প্রথম দফার ভোটে তৃতীয় হওয়া প্রার্থী সিনান ওগান সমর্থন দেয়ায় আবারও ক্ষমতায় আসতে পারেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
শুক্রবার (২৬ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট নিয়ে দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শেষ হাসিটা কে হাসবেন–এরদোয়ান নাকি কিলিচদারোগলু, তা নিয়য়ে চলছে বিশ্লেষণ।
দেশের দায়িত্বভার কাকে দেবে জনগণ, তা জানতে সবার চোখ এখন তুরস্কের ১০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে।
গত ১৪ মে-র প্রথম দফার ভোটে এরদোয়ান এগিয়ে থাকলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। দরকার ছিল ৫০ শতাংশ ভোট, কিন্তু পেয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। ফলে দেশটির সংবিধান অনুযায়ী ভোট গড়িয়েছে দ্বিতীয় দফায়। তার প্রধান প্রতিপক্ষ কিলিচদারোগলু পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর প্রথম দফা ভোটে তৃতীয় হওয়া প্রার্থী প্রার্থী সিনান ওগান পেয়েছিলেন ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট।
এদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফা ভোটে এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সিনান ওগান। দেশটির বিভিন্ন জরিপেও উঠে এসেছে কিলিচদারোগলুর চেয়ে জনপ্রিয়তায় এরদোয়ানের এগিয়ে থাকার খবর। তাই বিশ্লেষকররা বলছেন, আবারও এরদোয়ানই রাষ্ট্রক্ষমতায় আসছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এরদোয়ান জানেন কীভাবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হয়। সেই কৌশল অবলম্বন করেই ধরে রেখেছেন জনপ্রিয়তা। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দার মুখেও এরদোয়ান তুরস্ককে একটি সহনশীল অবস্থার মধ্যে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
অনেকের মতে, এরদোয়ান বিশ্বের মানচিত্রে তুরস্ককে প্রতিষ্ঠিত করতে এগিয়ে নিচ্ছেন। আর তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাকে সমর্থন করেন।
যদিও গত এক দশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়, চলতি বছরের ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও নানা ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়েছেন এরদোয়ান। তবে বিতর্ক ছাপিয়ে জনপ্রিয়তায় যে ভাটা পড়েনি, নির্বাচনে এগিয়ে থাকা তারই প্রমাণ।
দেশ ছাড়াও বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনেও নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন এরদোয়ান। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে যখন বিশ্বের বড় বড় নেতা নিজেদের অসহায়ত্বের প্রমাণ দিয়েছেন, তখন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় সফল এরদোয়ান। বিশ্ব জ্বালানিসংকট এবং কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সার কিংবা খাদ্যশস্য সরবরাহের দুরূহ কাজটি অত্যন্ত সফলভাবে সম্পাদন করেছেন। মুসলিম বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে নিজেকে একজন অভিজ্ঞ ও ঝানু রাজনীতিক প্রমাণ করেছেন তিনি।
আরো পড়ুন: টিভি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে নিয়ে যা বললেন পর্ন তারকা স্টর্মি
বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমাদের চাপ থেকে বাঁচতে চীনের পথেই হাঁটছে তুরস্ক। চীনের মতোই সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরান থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বজায় রেখেছেন সুসম্পর্ক। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর দ্বিতীয় সদস্য হয়েও রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হয়েছে তুরস্ক।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল সামরিক ও বেসামরিক প্রভাব-প্রতিপত্তিকে পাশ কাটিয়ে নিজ দেশে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
এত কিছুর পরও এরদোয়ান তৃতীয় দফা প্রেসিডেন্ট হলে তুরস্কে জাতীয়তাবাদ আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন সংখ্যালঘু কুর্দিরা।
এম/