বুধবার, ৩রা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এশিয়া মহাদেশ ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছে হাতির দল

ডেস্ক নিউজ

🕒 প্রকাশ: ০৩:৩৩ অপরাহ্ন, ১০ই মে ২০২৩

#

ভারতের আসামের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের বন্য এলাকা ছাড়ছে হাতির পাল এএফপি

পাহাড়ি বনাঞ্চল ধ্বংস করে চাষাবাদ হচ্ছে। অন্ন সংস্থান হচ্ছে মানুষের। গড়ে উঠছে জনবসতি। তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন অবকাঠামো। এতে সংকুচিত হচ্ছে হাতির বিচরণক্ষেত্র ও খাদ্যের উৎস। আবাসস্থল ও খাবারের খোঁজে স্থলভাগের বৃহত্তম এ বন্যপ্রাণীকে পাড়ি দিতে হচ্ছে অন্য কোনো স্থানে। শত শত বছর ধরে এসব কর্মকাণ্ডের কারণে এশিয়া ছাড়ছে হাতির দল। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাতিরা এশিয়াজুড়ে তাদের আবাসস্থলের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হারিয়েছে। বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত এশীয় হাতি এ মহাদেশের ১৩টি দেশে পাওয়া যায়। তাদের বন ও তৃণভূমির আবাসস্থল ১৭০০ সাল থেকে ৬৪ শতাংশের বেশি কমে গেছে। হারিয়ে যাওয়া এ জমির পরিমাণ ৩৩ লাখ বর্গকিলোমিটার।

সম্প্রতি সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জীববিজ্ঞানী শেরমিন ডি সিলভা। পাহাড়ি অঞ্চলে হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ এবং হাতি মেরে ফেলার মতো ঘটনাও সাধারণ হয়ে উঠেছে। গবেষক দলটি খুঁজে পেয়েছে বড় আকারের আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়া হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘর্ষের অন্যতম কারণ। অথচ সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সহজেই এ পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, হাতির বাসস্থানের সবচেয়ে বড় পতন ঘটেছে চীনে। পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ১৭০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে হাতির ৯৪ শতাংশ আবাসস্থল হারিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত। দেশটিতে হাতির আবাসস্থল হারানোর হার ৮৬ শতাংশ। এ ছাড়া বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় অর্ধেকের বেশি হাতির উপযুক্ত আবাসস্থল কমে গেছে; ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায়ও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।

গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, ঔপনিবেশিকতা হাতির আবাসস্থল হারানোর গতি বাড়িয়েছে। ১৭০০ সাল থেকে হাতির আবাসস্থল হ্রাস ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এটি এই অঞ্চলে ইউরোপীয় উপনিবেশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে মিলে যায়। এ সময়ে গাছ কাটা, রাস্তা নির্মাণ, প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন ও বন উজাড়ের মতো কার্যক্রম বেড়ে যায় এবং জমিতে কৃষিকাজ আরও সম্প্রসারিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যুগে যুগে নতুন মূল্য ও বাজার ব্যবস্থা এবং শাসননীতি ইউরোপের শহর ছাড়িয়ে এশিয়ার বনে পৌঁছেছে। এগুলো হাতির আবাসস্থল হ্রাস এবং প্রজাতির বিভক্তকরণকে ত্বরান্বিত করেছে। ১৭০০ সালে একটি হাতি কোনো বাধা ছাড়াই উপযুক্ত অঞ্চলের ৪৫ শতাংশ অতিক্রম করতে পারত। কিন্তু সে হার ২০১৫ সালে মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

উপনিবেশের পর গত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে শিল্পবিপ্লবের হাত ধরে হাতির আবাসস্থল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেরমিন সিলভা বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, থাইল্যান্ড ও চীনের মতো দেশগুলোয় ১৯৫০-এর দশকের পর হাতির আবাসস্থল ধ্বংস দ্রুততর হয়। বর্তমানে পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষি ও খনিকেন্দ্রিক কার্যক্রম বনাঞ্চল উজাড়কে উৎসাহিত করছে। আর এগুলো হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়িয়ে তুলছে। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুও ভূমিকা রেখেছে।

আরো পড়ুন: এক দশক পর সন্ধান মিলল হারানো বিড়ালের

২০১৭ সালে নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দেশটির প্রায় ১০ লাখ নাগরিক এখন কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। অথচ এ অঞ্চলটি একসময় হাতির বিচরণক্ষেত্র ছিল।

গবেষকরা বলছেন, হাতিরা সাধারণত দীর্ঘজীবী এবং অত্যন্ত অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন। তাই যখন এরা এদের আবাসস্থল হারায়, তখন নতুনের সন্ধানে দূর-দূরান্তে পাড়ি জমায়। তা ছাড়া এশিয়ার সংরক্ষিত এলাকাগুলো ছোট এবং উঁচু রুক্ষ ভূখণ্ডে বেষ্টিত। এ জন্য গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, হাতির সংখ্যা টিকিয়ে রাখতে সংকুচিত ও প্রান্তিক আবাসস্থলেই এদের অভিযোজনে সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি হাতির উপযুক্ত আবাসগুলো শনাক্ত এবং সবকটিকে সংযুক্ত করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন।

এম এইচ ডি/ আইকেজে 

বন্যপ্রাণী এশিয়া হাতি

খবরটি শেয়ার করুন