সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনের বিআরআই প্রকল্পের জন্য ঋণে জর্জরিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:০৯ অপরাহ্ন, ৩০শে এপ্রিল ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর সাথে যুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে। কোনও কোনও দেশে চীনা ব্যবস্থাপকেরা তাদের ঔপনিবেশিক মনমানসিকতার জেরে বিআরআই ঋণ গ্রহীতা দেশগুলোর জনগণদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানছে। অপরদিকে চীনা ঋণের বোঝা কাঁধ থেকে নামাতে নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ চীনের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কোনও কোনও দেশ।

পাকিস্তানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে দায়িত্বরত এক চীনা নাগরিক স্থানীয় শ্রমিকদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জেরে ব্লাসফেমির অভিযোগে এখন পাকিস্তানের কারাগারে আটক রয়েছেন। পাকিস্তানের মানুষ তার মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছে।

অন্যদিকে চীনা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে কলম্বো ১ লাখ বিপন্ন বানরকে চীনে পাঠাতে বাধ্য হয়েছে। এই প্রাণীদেরকে এখন চীনের তথাকথিত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য গবেষণাগারেই মেরে ফেলা হবে।

চীনা নাগরিক তিয়ান পাকিস্তানের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত শুক্রবার শ্রমিকেরা যখন নামাজ আদায়ের জন্য যাচ্ছিল তখন তিনি তাদের ধর্ম নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।

রমজান মাসে রোজা রেখে শ্রমিকেরা ধীরগতিতে কাজ করছিল, এ নিয়েও অভিযোগ করেন তিনি। তাছাড়া ধর্ম নিয়ে অন্যান্য অবমাননাকর মন্তব্য করতেও ছাড়েন নি তিনি।

চীনা নাগরিককে গ্রেফতারের দাবিতে কারাকোরাম হাইওয়ে অবরুদ্ধ করে পাকিস্তান শ্রমিকেরা। ছয় থেকে সাত ঘন্টা ধরে বিক্ষোভ চলার পর তিয়ানকে গ্রেফতার করা হলে রাস্তা ছাড়েন শ্রমিকেরা। পাকিস্তানে ব্লাসফেমির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

সেনাবাহিনীর বিমানে করে তিয়ানকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রকল্পে কর্মরত অন্যান্য চীনা প্রকৌশলীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চীনা ক্যাম্পে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। চীনা প্রকৌশলী তিয়ানকে দাসু থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে একটি নির্জন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্লাসফেমিসহ সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগও রয়েছে।

তবে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে রাজি নয় চীন। আর তাই চীনা নাগরিককে গ্রেফতারের বিষয়ে এখনও কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি দেশটি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জানান, পাকিস্তানে অবস্থানরত চীনা দূতাবাস এখনও তথ্য যাচাইয়ের চেষ্টা করছে।

এই একই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ২০২১ সালে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ করা হয়। এ ঘটনায় নয়জন চীনা প্রকৌশলীসহ ১৩ জন নিহত হন। চীনের বিআরআই প্রকল্প নিয়ে তীব্র অসন্তুষ্ট পাকিস্তানের নাগরিকেরা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে চীনা কোম্পানিগুলো নাগরিকদের জমিগুলো দখল করছে। একইসাথে তারা পরিবেশের দূষণও ঘটাচ্ছে। তাছাড়া এসব প্রকল্পে চীনা নাগরিকেরাই কাজের সুবিধা পাচ্ছে। ফলে পাকিস্তানি নাগরিকদের কোন উপকারেই আসছে না এ প্রকল্প।

আরও পড়ুন: ‘আস্থা ভোটে’ জয় পেলেন শাহবাজ শরীফ

শ্রীলঙ্কা থেকে বিপন্ন প্রজাতির ১ লাখ বানর পাঠানো নিয়ে শঙ্কিত শ্রীলঙ্কার পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো। একটি বেসরকারি মালিকানাধীন চীনা কোম্পানি থেকে শ্রীলঙ্কাকে বানর রপ্তানির কথা জানানো হয়।

২০২৩ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে চীন জানিয়েছিল তারা শ্রীলঙ্কার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার আয়োজন করবে যার দ্বারা দেশটি তার ঋণ পরিশোধে সক্ষম হয়। জানা যায়, ১ লাখ বানরকে চীনে প্রসাধনী পণ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হবে।

ইতিমধ্যেই চীনের কাছে হাম্বানটোটা বন্দর বন্ধক রেখেছে শ্রীলঙ্কা। এখন চীনের লোভ মেটাতে নিজেদের বন্যপ্রাণীকেও হারাতে চলেছে দেশটি।

বিআরআই প্রকল্প গ্রহণের পর থেকে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা উভয় দেশই বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। উভয় দেশই ঋণের আশায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়েছে।

২০২২ সালের শেষ নাগাদ, শ্রীলঙ্কার কাছে চীনের ঋণের মজুদ ৭৩ কোটি মার্কিন ডলার। শ্রীলঙ্কা যদি বিপুল সংখ্যক বানর পাঠিয়ে এ ঋণ পরিশোধে রাজিও হয়, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল রাজি হবে কি না এ বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত।

এমএইচডি/ আই. কে. জে/

চীন বিআরআই প্রকল্প ঋণ দক্ষিণ এশিয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পাকিস্তান

খবরটি শেয়ার করুন