সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনের বিরোধিতার ফলে ক্ষতির সম্মুখীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:৩৯ অপরাহ্ন, ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

২০১৭ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারক হিসেবে ভারতীয় প্রার্থী দালভীর ভান্ডারিকে পুন:নির্বাচিত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে জাতিসংঘের ভারতীয় মিশন। তাকে পুন:নির্বাচিত করতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন ছিল।

বেশ কয়েক রাউন্ড ভোটের পর ভান্ডারির বিপরীতে দাঁড় করানো হয় যুক্তরাজ্যের বিচারক ক্রিস্টোফার গ্রিনউডকে। ক্রিস্টোফার গ্রিনউড ছিলেন ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে যুক্তরাজ্যের একজন প্রার্থী। অর্থাৎ ভারতকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়।

ভারতীয় কূটনৈতিক যিনি ভারতকে সবসময় সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাকে তখন ভারতের বিপদের সময় যুক্তরাজ্যের প্রয়োজনীয়তার কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। ২০২১ সালে হারপারকলিন্স পাবলিশার্স ইন্ডিয়া থেকে প্রকাশিত "ভারত বনাম যুক্তরাজ্য" বইটি লিখেন জাতিসংঘে ভারতের প্রাক্তন স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন৷ তিনি তার বইয়ে বর্ণনা দেন কীভাবে নয়াদিল্লির আগ্রাসী কূটনৈতিক ব্যবস্থার ফলে আন্তর্জাতিক আদালতে সেসময় ভান্ডারির জয়লাভ হয়।

১৯৬৩ সাল থেকেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গঠন অপরিবর্তিত রয়েছে। জাতিসংঘ সনদে উল্লেখিত আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে এ পরিষদের উপর। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র পাঁচটি। যথা: যুক্তরাজ্য, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ফ্রান্স। এছাড়া এর দশটি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। এদেরকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোট অনুযায়ী নির্বাচিত করা হয়। ভারত এ পর্যন্ত আটবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

জাতিসংঘে ভারতের প্রাক্তন স্থায়ী প্রতিনিধি, অশোক মুখার্জি বলেন, নির্বাচিত সদস্য রাষ্ট্রগুলোও ভেটো ক্ষমতার চাপের মুখে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম নয়। কাউন্সিলের যেকোনও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করার অধিকার নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রসমূহের রয়েছে।

১৯৭৯ সালের নভেম্বরে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে সমান অংশগ্রহণের ব্যাপারে প্রথমবারের মতো দাবি উত্থাপন করে ভারতসহ দশটি উন্নয়নশীল দেশ। ১৯৯২ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়ন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ঠান্ডা যুদ্ধ সমাপ্ত হলে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ ইউএনএসসি সংস্কারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে।

২০০৮ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাসহ পাঁচটি বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন পর্যন্ত এসমস্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোন ধরনের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।

২০০৮ সাল থেকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনানুষ্ঠানিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনা করে ইন্টার গভর্মেন্টাল নেগোসিয়েশন (আইজিএন)। তবে এদের অনানুষ্ঠানিক প্রকৃতির কারণে কোনও ধরনের সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত গৃহীত হয়নি।

অন্যদিকে জাপান, ভারত, ব্রাজিল এবং জার্মানি রাজনৈতিক সহযোগী জোট জি-৪ এর অংশ। এসব দেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন গ্রহণের জন্য চেষ্টা করে চলেছে। তবে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের ব্যাপারটি থেমে থাকার কারণ হিসেবে রাষ্ট্রদূত মুখার্জি চীনের তীব্র বিরোধিতাকে উল্লেখ করেন।

আর.এইচ/ আই.কে.জে/

চীন

খবরটি শেয়ার করুন